দুই সাংসদের সঙ্গে কথা বললেন শুভেন্দু। ফাইল চিত্র
দলের দুই সাংসদ অর্জুন সিংহ এবং সৌমিত্র খাঁকে নিয়ে অস্বস্তি দূর করতে বৈঠকে বসলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি সূত্রে খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশেই সম্প্রতি ‘বেসুরো’ দুই সাংসদকে শুক্রবার কলকাতায় নিজের দফতরে ডেকে দীর্ঘ সময় কথা বলেন বিরোধী দলনেতা। তবে সেই বৈঠকের পরে দুই বিধায়কের সুর নরম হয়েছে কি না, তা জানা যায়নি।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির সমালোচনায় নাগাড়ে সরব হওয়া ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুনের ‘ঘরওয়াপসি’-র সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়। আবার অনেক দিন ধরেই ‘বেসুরো’ বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র। বালিগঞ্জ ও আসানসোলের উপনির্বাচনে দলের খারাপ ফলের পরে রাজ্য নেতৃত্ব ‘অপরিণত’ বলে আক্রমণও শানান তিনি। অর্জুনের পাশাপাশি সৌমিত্রও পুরনো দল তৃণমূলে ফিরে যেতে পারেন বলে শঙ্কা তৈরি হয় গেরুয়া শিবিরে। সম্প্রতি কলকাতায় দলের মহামিছিলে অনুপস্থিত ছিলেন দু’জনেই। পরে কলকাতায় দক্ষিণবঙ্গের জনপ্রতিনিধিদের বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অর্জুন এলেও সৌমিত্র আসেননি। তার কয়েক দিন পরেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফর ছিল রাজ্যে। যদিও দুই সাংসদই কলকাতায় শাহের বৈঠকে হাজির ছিলেন। তবে অস্বস্তি কাটেনি বিজেপি। সূত্রের খবর, শুক্রবার সেই অস্বস্তি কাটাতে এবং দুই সাংসদের ‘মনের কথা’ জানতেই বৈঠক করেন শুভেন্দু। সাংসদদের নিয়ে কোনও সমস্যা হলে সাধারণ ভাবে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে এই দু’জনের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মেটানোর জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফেই শুভেন্দুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্য বিজেপির এক নেতা।
দুই সাংসদের মধ্যে অবশ্য অর্জুনকে নিয়ে বিজেপির মাথাব্যথা বাড়ে বেশি। বৃহস্পতিবারই তাঁকে দিল্লিতে তলব করেছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। গিয়েও ছিলেন অর্জুন। যাওয়ার আগে বলেন, ‘‘আমার ইমোশন, ইগো কাজ করে না। আমি শ্রমিক-কৃষকের জন্য লড়াই করেছি। মনে করেছি সেটা করা উচিত। পীষূষ গয়ালের সঙ্গে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। উনি ডেকেছেন। বলেছেন, ‘আপনি আসুন। এটা নিয়ে আলোচনা হবে।’ যত ক্ষণ না দাবি আদায় হচ্ছে তত ক্ষণ খুব খুশি হওয়া বা খুব কষ্ট পাওয়ার দরকার নেই।’’ রাতেই ফিরে আসেন। শুক্রবার বৈঠক করলেন শুভেন্দুর সঙ্গে। সেই বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও আলোচনার বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনের তরফে বার বার ফোন করা হলেও সাড়া দেননি সৌমিত্র।
অর্জুন ঘনিষ্ঠেরা যদিও জানিয়েছেন, পাটশিল্পের সমস্যা নিয়ে সাংসদ কোনও ভাবেই সুর নরম করতে রাজি নন। এই নিয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ চার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের চিঠি দিয়েছেন। অনেকের মতে তৃণমূলে যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করতেই মমতাকে চিঠি পাঠান অর্জুন। এর পরেই অর্জুনকে বোঝাতে সক্রিয় হয় বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জুট কমিশনারের অপসারণের দাবি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এর পরে বস্ত্র মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁর চাপেই কেন্দ্র রাজ্য এবং পাটশিল্পের সংগঠনের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়। কিন্তু তাতেও সমাধানের পথ পাওয়া যায়নি বলেই খবর। এই সবের মধ্যে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার জল্পনা নিয়ে অর্জুন বলেন, ‘‘রাজনীতিতে এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়া অপরাধ নয়।’’ যা জল্পনা আরও বাড়িয়ে দেয়। শুক্রবার শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠকের পরে সুর নরম হয় কি না সেটা দেখার অপেক্ষায় গেরুয়া শিবির।