শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
উপনির্বাচনে মাদারিহাট বিধানসভা আসন কি ধরে রাখতে পারবে বিজেপি? রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী মনে করছেন, শুধু মাদারিহাট নয়, ‘সুষ্ঠু’ ভাবে ভোট হলে আরও দু’টি আসন তৃণমূলের থেকে ছিনিয়ে নেওয়াও অসম্ভব নয় বিজেপির পক্ষে। আগামী ১৩ নভেম্বর রাজ্যের ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন। মেদিনীপুর, হাড়োয়া, তালড্যাংরা, নৈহাটি, সিতাই এবং মাদারিহাট আসনে উপনির্বাচন হবে। ২৩ নভেম্বর ফল ঘোষণা।
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে এই ছ’টির মধ্যে পাঁচটিতেই জিতেছিল তৃণমূল। বিজেপি জিতেছিল শুধু মাদারিহাট আসনে। সেই মাদারিহাটের বিধায়ক মনোজ টিগ্গা আলিপুরদুয়ার লোকসভা থেকে সংসদ সদস্য হয়ে দিল্লি গিয়েছেন। বাকি পাঁচটি আসনের তৃণমূল বিধায়কেরাও গত লোকসভা ভোটে জিতে সাংসদ হয়েছেন। সে কারণেই এই ছয় আসনে উপনির্বাচন হতে যাচ্ছে।
উপনির্বাচন নিয়ে শাসকদলের মধ্যে ভোট ঘোষণার আগে থেকেই যে প্রস্তুতি বা তৎপরতা নজরে পড়ছে, সেই তুলনায় বিজেপি কিংবা বাম-কংগ্রেস শিবিরে অনেকটাই গা-ছাড়া মনোভাব। এমনিতেই ‘ছোট’ বা ‘বড়’ কোনও ভোটকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনও কম গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না। এ বার তার উপরে রয়েছে আরজি কর আন্দোলনের ‘চাপ’। চিকিৎসক আন্দোলন বা নাগরিক আন্দোলনের পরিধি ‘একটি সঙ্কীর্ণ অংশের মধ্যে’ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে তৃণমূল নেতারা অনেকেই মনে করছেন। সেটি ‘প্রমাণ’ করার জন্যই এই উপনির্বাচনে ‘ছয়ে ছয়’ ফল করতে চাইছে শাসকদল। উল্টো দিকে বিরোধী কোনও দলের মধ্যেই এখনও মরিয়া মনোভাবের কোনও ছবি ধরা পড়ছে না। অনেক নেতা তো বলেই ফেলছেন, তৃণমূল তো ভোটটাই করতে দেবে না।
এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতাও। একই সঙ্গে তিনি মনে করছেন, বিজেপির প্রাক্তন মুখ্যসচেতকের আসনটি (মাদারিহাট) জিততে পারে তাঁর দল। কারণ ২০১৬ এবং ২০২১ শেষ দু’টি বিধানসভা নির্বাচনেই এই আসনে বিজেপির প্রতীকে জিতেছিলেন মনোজ। ২০১৯ এবং ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনেও মাদারিহাট আসন বড় ‘লিড’ দিয়েছিল বিজেপিকে।
মাদারিহাট ছাড়াও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মেদিনীপুর আসন এবং বাঁকুড়া জেলার তালড্যাংরা আসনেও বিজেপি ভাল ফল করতে পারে বলে মনে করেন শুভেন্দু। তাঁর কথায়, ‘‘উপনির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ ভাবে হলে মাদারিহাট-সহ তালড্যাংরা এবং মেদিনীপুর আসন জেতার সুযোগ রয়েছে আমাদের কাছে।’’ একই সঙ্গে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘তবে বিগত উপনির্বাচনে আমাদের অভিজ্ঞতা ভাল নয়। লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে রায়গঞ্জে ৪৬ হাজার ৭৩৯ এবং রানাঘাট দক্ষিণ আসনে ৩৬ হাজার ৯৩৬ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু উপনির্বাচনে ভোট লুট করে ওই আসন জিতে নিয়েছিল তৃণমূল। তাই সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলে তিনটি উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীদের জেতার সুযোগ থাকবে।’’
অন্য দিকে ছ’টি বিধানসভার উপনির্বাচনেই জিততে চায় শাসকদল তৃণমূল। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে মাদারিহাট আসনে ১১ হাজার ৬৩ ভোটে এগিয়ে বিজেপি। সিতাই কেন্দ্রে তৃণমূল এগিয়ে ২৮ হাজার ৩৭৭ ভোটে। তালড্যাংরায় ৭ হাজার ৪৮৩ ভোটে, মেদিনীপুরে ২ হাজার ১৭০ ভোটে, হাড়োয়ায় ১ লক্ষ ১০ হাজার ৯৯১ এবং নৈহাটিতে ১৫ হাজার ৫১৮ ভোটে এগিয়ে তৃণমূল। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে এর মধ্যে মেদিনীপুরে ১৬ হাজার ৬৪১ ভোটে এবং তালড্যাংরায় ১৭ হাজার ২৬৮ ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। সেই ফলকে বিশ্লেষণ করেই জয়ের আশা করছেন বিরোধী দলনেতা। তবে সুষ্ঠু ভোট হবে কি না, তা নিয়েই বার বার প্রশ্ন তুলছেন শুভেন্দু।