শুক্রবার ব্রিগেড ময়দান পরিদর্শনে যান শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসছেন না। তবে তাঁকে ছাড়াই লক্ষ কণ্ঠে লক্ষ্য ছুঁতে চান আয়োজকরা। কর্মসূচির দু’দিন আগে ব্রিগেড ময়দানেই সাংবাদিক বৈঠক করে সেই ঘোষণা করা হল। সেখানে দাবি করা হয়, কোনও রকম রাজনৈতিক ছোঁয়াচ না রেখে দেশে প্রথম এত বড় সামজিক অনুষ্ঠান হতে চলেছে। তবে পরে ময়দানেই পৃথক একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে তিনি উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ থেকে কত মানুষ রবিবার ব্রিগেডে আসবেন সেই ঘোষণা করেন।
কর্মসূচির দু’দিন আগে শুভেন্দু-সহ আয়োজক সন্ন্যাসীরা ব্রিগেড ময়দান পরিদর্শন করেন। প্রথমে ঠিক ছিল মোদী এলে দু’টি মঞ্চ হবে। একটিতে মোদী এবং দ্বারকা পীঠের শঙ্করাচার্য সদানন্দ সরস্বতী থাকবেন। অন্য মঞ্চে হবে নজরুল গীতি, গীতাপাঠ-সহ অন্যান্য কর্মসূচি। এখন একটিই মঞ্চ হচ্ছে। ‘পার্থসারথি মঞ্চ’ নির্মাণের কাজে প্রায় শেষ। আয়োজকদের দাবি শনিবারের মধ্যে বাকি প্রস্তুতিও শেষ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে দূরের জেলার অংশগ্রহণকারীরা কলকাতায় আসতে শুরু করেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গা থেকে গীতাপাঠে অংশগ্রহণকারীদের নিয়ে আসতে ১০টি ট্রেন ভাড়া করেছেন আয়োজকরা। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে কোনও ট্রেন আসছে না। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘অর্থাভাবের জন্য আমরা উত্তরবঙ্গ থেকে কলকাতায় আসার কোনও ট্রেনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। তা সত্ত্বেও কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানুষ আসবেন। আর দক্ষিণবঙ্গ ও কলকাতা মিলিয়ে গীতাপাঠে যোগ দেবেন এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ।’’ তিনি নিজে রবিবার স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে গীতা বিলির কাজ করবেন বলেও জানিয়েছেন শুভেন্দু।
প্রধানমন্ত্রীর সামনে চারটি বিশ্বরেকর্ড গড়ার স্বপ্ন নিয়ে প্রস্তুতি চালান গীতাপাঠের আয়োজকরা। কিন্তু প্রায় শেষ বেলায় গত মঙ্গলবার জানা যায় রবিবার কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন না মোদী। এর পরে বেশ হতাশা দেখা গিয়েছিল আয়োজকদের মধ্যে। তবে এখন আর কোনও হতাশা নয়, লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে মোদী না থাকলেও যেমনটা ভাবা হয়েছিল তেমনটাই হবে। ৬০ হাজার মহিলা শঙ্খ বাজাবেন। ৭০ হাজার জন সমবেত কণ্ঠে ‘হে পার্থসারথি’ নজরুল গীতি গাইবেন। এর পরে ‘লক্ষাধিক কণ্ঠে গীতাপাঠ’। এটাই নতুন লক্ষ্য। এই কর্মসূচির অন্যতম আয়োজক বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা শচীন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, ‘‘আমাদের কর্মসূচিতে গীতাপাঠই মুখ্য। প্রধানমন্ত্রী এলে আমাদের ভাল লাগত তবে তিনি না এলেও গীতা ভক্তদের আগ্রহ একটুও যে কমেনি সেটাই দেখা যাবে রবিবার ব্রিগেড ময়দানে। কোনও রাজনৈতিক ছোঁয়া ছাড়াই অতীতে কোথাও এত বড় কর্মসূচি হয়নি। রবিবার রাজ্যের আদিবাসী সমাজের বহু মানুষও এই কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।’’
তবে মোদী কেন আসছেন না তা নিয়ে এখনও ধন্দ কাটেনি আয়োজকদের। মঙ্গলবার রাতে শুভেন্দু দাবি করেছিলেন, সাধুসন্তদের মেল করে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে মোদী যে আসতে পারছেন না তা জানানো হয়েছে। সেখান থেকেই তিনি-সহ বিজেপি নেতৃত্ব জানতে পারেন বলে দাবি করেছিলেন শুভেন্দু। তবে শুক্রবার আয়োজকদের পক্ষে দাবি করা হয়, প্রধানমন্ত্রী নিজের থেকে এই অনুষ্ঠানে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। তাতেই আমন্ত্রণ জানানো হয় এবং তিনি কথা দেন। পরে সেই মতো কর্মসূচি সাজানো হয়। কিন্তু লিখিত ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দফতর এখনও পর্যন্ত কোনও চিঠি দেয়নি। তবে মোদী আসবেন বলে কর্মসূচি ছোট করতে পরিকল্পনা থাকলেও গীতার অষ্টাদশ অধ্যায়ের পাঠ হবে না বলে ঠিক হয়েছিল। এখন পুরনো পরিকল্পনা মতোই গীতার প্রথম, দ্বিতীয়, দ্বাদশ, পঞ্চদশ এবং অষ্টাদশ অধ্যায়ের পাঠ হবে রবিবার।