অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ রাহুল সিনহার। —ফাইল চিত্র।
সকালে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘বাম ঘেঁষা’ বলে দাগিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল। বিকেলে তাঁকেও ছাপিয়ে গেলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে নোবেলজয়ীকে তীব্র কটাক্ষ করলেন তিনি। নাম না করে একই সঙ্গে কটাক্ষ করলেন আর এক নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনকেও। রাহুলের কথায়, ‘‘যাঁদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদেশি, তাঁরাই নোবেল পান।’’
শুক্রবার সকালেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করেন পীযূষ গয়াল। অভিজিতের চিন্ত-ভাবনাকে বাম ঘেঁষা বলে উল্লেখ করেন তিনি। তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মন্তব্যকেই সমর্থন করেন রাহুল সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘পীযূষ গয়াল ভুল কিছু বলেননি। দেশের অর্থনীতিটাকেও বামপন্থী নীতিতে নামিয়ে এনেছেন ওঁরা। যাঁদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদেশি, তাঁরাই নোবেল পেয়ে যাচ্ছেন। এটাই বুঝি এখন নোবেল পাওয়ার ডিগ্রি হয়ে দাঁড়িয়েছে।’’
অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নোবেল পাওয়ার পর থেকেই তাঁর উদ্দেশে একাধিক তির্যক মন্তব্য উড়ে এসেছে গেরুয়া শিবির থেকে। এ দিন তাতেই নয়া সংযোজন পীযূষ ও রাহুল। এ দিন সকালে পুণে-তে একটি আলোচনা সভায় পীযূষ বলেন, ‘‘নোবেল পাওয়ার জন্য অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দন জানাই। কিন্তু অর্থনীতি নিয়ে ওঁর চিন্তা-ভাবনা সম্পর্কে সকলেই অবগত, যা সম্পূর্ণ বাম ঘেঁষা। কংগ্রেসের ন্যয় প্রকল্পের প্রশংসা করেছিলেন উনি। কিন্তু ভারতের মানুষ ওঁর সেই ভাবনাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছেন।’’
আরও পড়ুন: পরাঠা-পরোটা, সওরভ-সৌরভ! আচমকা ফ্লেক্স প্রচার শহর জুড়ে, ‘উস্কানি’ দেখছে বিজেপি, তৃণমূল চুপ
পীযূষ আরও বলেন, ‘‘এক জন ভারতীয় নোবেল পেয়েছেন। তার জন্য গর্বিত আমি। তাই বলে ওঁর চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে একমত হতে হবে এমন নয়। বিশেষত, গোটা দেশ যখন ওঁর ধারণা খারিজ করেছে। আমার মনে হয় ওঁর পরামর্শের প্রয়োজন নেই আমাদের।’’
বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের এমন মন্তব্য নিয়ে ইতিমধ্যেই সমালোচনা ঝড় উঠেছে রাজনৈতিক মহলে। আর এক নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সঙ্গেও বরাবর বিরোধ বিজেপির। আবার অভিজিতও মোদী সরকারের নীতি-নিয়মের ঘোর সমালোচক বলে পরিচিত। তাই ইচ্ছাকৃত ভাবে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি হচ্ছে বলে দাবি বাম-সহ একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের।
ইতিমধ্যেই রাহুল সিংহের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেছেন বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘অমর্ত্য সেনের মতো অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যক্তিগত জীবনকে কলুষিত করার চেষ্টা চলছে। ওঁদের এই কথা বলার কোনও যোগ্যতাই নেই। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের দয়ায় নেতা হয়েছেন রাহুল সিংহ। পশ্চিমবঙ্গ ফাজলামি করার জায়গা নয়।’’
মতাদর্শ ভিন্ন হলেও, এ ব্যাপারে বামেদের সঙ্গে একমত তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘বিজেপির নীতি সমর্থন না করলেই আক্রমণ করবে ওরা। অভিজিৎ এমন কিছু বলেননি যে বামপন্থী স্ট্যাম্প মেরে ওঁকে দূরে সরিয়ে দিতে হবে। আর বামপন্থী-দক্ষিণপন্থী যাই হোন না কেন, অর্থনীতি এবং দেশের মঙ্গল চাইছেন কি না দেখতে হবে। এক জন অতিবামও যদি সঠিক কিছু বলেন, হাসিমুখে তা গ্রহণ করব আমি।’’
আরও পড়ুন: শঙ্খ ঘোষদের ডি-লিট দেবে যাদবপুর, প্রথমে আপত্তি জানিয়েও পরে মেনে নিলেন আচার্য
পীযূষের মন্তব্য নিয়ে সুজন বলেন, ‘‘বিজেপির মতো একটা দল, যারা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, রেল এবং বিএসএনএল-কে বিক্রি করতে উঠেপড়ে লেগেছে, তাদের কাছ থেকে আর কিছু আশাও করা যায় না। বিজেপি এবং পীযূষ গয়ালের মতো নেতারা যে অভিজিতকে পছন্দ করবেন না, বরং তাঁকে হেয় করার চেষ্টা করবে, সেটাই তো স্বাভাবিক! বিজেপি নেতাদের কাছে একটাই অনুরোধ, দেশের গর্বকে নিয়ে এই ধরনের মন্তব্য না করলেই ভাল।’’
কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ন্যয় প্রকল্পকে সমর্থন করেছিলেন বলে কি অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কৃতিত্ব এ ভাবে খাটো করা যায়? এই ধরনের মন্তব্য বিজেপি নেতাদের শিক্ষা এবং মূল্যবোধকেই প্রতিফলিত করে।’’
তবে শুধুমাত্র রাজনীতিকরাই নন, বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে নিন্দা শুরু হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি নেতাদের ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।