অর্জুন সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।
ভবানী ভবনে জিজ্ঞাসাবাদের সময় সিআইডি আধিকারিকেরা তাঁর শরীরে ‘রাশিয়ান রাসায়নিক’ প্রয়োগ করে থাকতে পারেন বলে আগেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন বিজেপি নেতা অর্জুন সিংহ। সেই কারণে চোখে ‘বিশেষ’ চশমা পরে দ্বিতীয় বার সিআইডি দফতরে হাজিরা দিলেন ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ।
ভবানী ভবনের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে অর্জুন অবশ্য জানান, তিনি ‘রাশিয়ান রাসায়নিক স্প্রে’ নিয়ে একেবারেই ভীত বা আতঙ্কিত নন। তিনি স্রেফ আগাম সতর্কতা নিয়ে রাখছেন। তাঁর দাবি, তিনি তথ্য দিয়ে প্রমাণ করে দেবেন যে রাসায়নিক স্প্রে-র অস্তিত্ব রয়েছে! অর্জুনের কথায়, ‘‘ভয়ের কোনও ব্যাপার নেই। আমি তথ্য দিয়ে প্রমাণ করে দেব যে, এটা আছে। এটা নিয়ে সারা পৃথিবীতে কতগুলো ঘটনা ঘটেছে, তা সকলে জানে। আর এর রিঅ্যাকশন তো ১০ দিনের মধ্যে বেরোবে না। সকলেই জানেন যে, এর আগে সিআইডি দফতরে যখন গিয়েছিলাম, তার ১০ দিনের মধ্যে একটা টেস্ট করিয়ে নিয়েছিলাম। তিন মাসের মধ্যে রিঅ্যাকশন বোঝা যায়। কোর্টে প্রমাণ করতে গেলে তো আমাকে টেস্ট করাতে হবে। সেটাই আমি করেছি।’’
রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তাঁকে প্রাণে মারার চক্রান্ত হয়েছে বলে দাবি করেছেন অর্জুন। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি এখন দলদাস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভয় পাচ্ছেন। তাই পুলিশ-সিআইডি দিয়ে এ সব করাচ্ছেন। কিন্তু এ সব করে কোনও লাভ হবে না। ২০২৬ সালে যে উনি ক্ষমতায় ফিরছেন না, সেটাই সকলে বুঝে গিয়েছে।’’
অর্জুনের মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এখন প্রতিক্রিয়া দেওয়া মুশকিল। কারণ উনি যে সময়ের কথা বলছেন, সে সময় উনি কোন দলে থাকবেন, সেটাই তো জানি না। তখন পরিস্থিতি দেখে প্রতিক্রিয়া দেওয়া যাবে।’’
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে টেন্ডার দুর্নীতি মামলায় অর্জুনকে ভবানী ভবনে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিআইডি। তাদের তলব নিয়ে পরে তিনি দাবি করেন, ভবানী ভবনে গিয়ে তিনি মুখে কিচ্ছু দেননি। চা-কফি তো দূরের কথা, জলও স্পর্শ করেননি। তিনি আশঙ্কা করেন, ‘‘বাইরে থেকে আনা রাশিয়ান বিষ বা অন্য কিছু কেমিক্যাল মিশিয়ে দেওয়া থাকতে পারে পানীয়ে, যার ফলে ধীরে ধীরে মৃত্যু হতে পারে। এমনকি, চেয়ারের পাশে কিছু স্প্রে করা হলেও কিছু দিন পর মারা যেতে পারেন ওই ব্যক্তি।’’
২০১০ থেকে ২০১৯ সালের গোড়া পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন অর্জুন। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে তিনি বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার পরেই ওই পুরসভার সাড়ে চার কোটি টাকার টেন্ডার দুর্নীতি নিয়ে সিআইডির আর্থিক অপরাধ দমন শাখা তদন্ত শুরু করেছিল। ২০২১ সালেও এই মামলায় অর্জুনকে তলব করা হয়েছিল। তবে অর্জুন দাবি করেছিলেন, তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬৫টা মামলা করেছে তৃণমূল। কিন্তু ৩৬৫ মিনিটও তাঁকে জেলে রাখতে পারেনি। তিনি বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূলে তো আমি গুড বয় ছিলাম! স্বয়ং মমতাদিই বলেছেন। আর আজ বিজেপি করায় দুর্নীতিবাজ? ৪০০ কোটি টাকা হলে দেখা যেত, মাত্র চার কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় কিনা অর্জুন সিংহকে তলব!’’ পরে অর্জুন দাবি করেছিলেন, সিআইডি তদন্তের নামে ডেকে এমন রাসায়নিক ‘স্প্রে’ করে দেওয়া হয়, তাতে দু’-তিন মাস পর মাল্টিঅরগ্যান ফেলিয়োর হয়ে মারা যেতে পারেন কেউ। অর্জুনের বক্তব্য ছিল, ‘‘ছ’মাসের মধ্যে মাল্টিঅরগ্যান ফেলিয়োর হয়ে আমার মৃত্যু হলে সরকার দায়ী। রাশিয়া থেকে রাসায়নিক এনে খুনের চক্রান্ত চলছে। আমি ডাক্তারি পরীক্ষা করাব।’’
করিয়েওছিলেন অর্জুন। শারীরিক পরীক্ষার পর আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘এ টু জ়েড — সমস্ত টেস্ট করিয়েছি। সব মিলিয়ে ১৪টি টেস্ট হয়েছে।’’ সেই ঘটনার পর ফের সিআইডি দফতরে হাজিরা দিলেন অর্জুন। এ বার চোখে ‘বিশেষ’ চশমা!