শঙ্কর চক্রবর্তী। নিজস্ব চিত্র
পুলিশকে গাছে বেঁধে রাখতে হবে। বাঁশ-বটির সাহায্যে আক্রমণ করতে হবে। পুলিশের ছেলেমেয়েরা অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলেও জল দেবেন না! নিদান বিজেপির উত্তর দিনাজপুরের জেলা সভাপতি শঙ্কর চক্রবর্তী। পুলিশের কথা বলতে গিয়ে তিনি টেনে এনেছেন কুকুরের প্রসঙ্গ। যার জেরে রবিবারই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ কার্যত সমর্থনই করেছেন শঙ্করবাবুকে। তাঁর মতে, পরিস্থিতির বিচারে এমন কথা কেউ বলতেই পারেন। দিলীপবাবু জানিয়েছেন, শঙ্করবাবুকে গ্রেফতার করে পুলিশ আগুনে ঘি ঢেলেছে। গ্রেফতার প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের নেতারা পুলিশকে বোমা মারতে বলেও পার পেয়ে যান। আমরা বললেই দোষ!’’ উত্তরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘যারা এ ধরনের কথা বলেন, তাঁরা শুধু রাজনীতির নয়, সমাজ জীবনেরও কলঙ্ক।’’ বিজেপি নেতার মন্তব্যের নিন্দা করেছে কংগ্রেস এবং সিপিএমও।
ইসলামপুরের দারিভিট গ্রামে নিহত দুই ছাত্রের বাড়ি এ দিন বিজেপি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে গিয়েছিলেন শঙ্করবাবু। সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ সভায় তিনি বলেন, ‘‘কুকুরকে জল দেবেন, কিন্তু পুলিশকে দেবেন না। পুলিশ কর্মী বা তাদের ছেলেমেয়েরা অসুস্থ হয়ে রাস্তায় পড়ে থাকলেও জল দেবেন না।’’ পাশাপাশি জেলার পুলিশ সুপারকেও এলাকায় ‘টিঁকতে’ না দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন তিনি। ডাক দিয়েছেন পুলিশকে ‘বয়কটে’র। যা শোনা মাত্র এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা জানিয়ে দেন, শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইসলামপুর থেকে ফেরার পথেই করণদিঘির বোতলবাড়ি এলাকায় গাড়ি থামিয়ে শঙ্করবাবুকে গ্রেফতার করা হয়।
শঙ্করবাবুর বক্তব্য প্রসঙ্গে শুভেন্দুবাবুর মন্তব্য, ‘‘এক সময় জঙ্গলমহলে মাওবাদীরা এ ভাষায় কথা বলত। এখন এরা হয়েছে নব্য মাওবাদী!’’ শুভেন্দুবাবু জানিয়েছেন, এ সব কথাতেই প্রমাণ হয়ে যায়, বিজেপি-আরএসএসের উস্কানিতেই ওখানে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বলি হয়েছে দুই ছাত্র। তাঁর দাবি, ময়না তদন্তেই স্পষ্ট, পুলিশের গুলিতে দুই ছাত্রের মৃত্যু হয়নি। বিজেপি-আরএসএস ওখানে গুলি-বন্দুক মজুত করেছিল। সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর আবেদন, ‘‘প্ররোচনায় পা দেবেন না।’’
আরও পড়ুন: কাঁটার আসনে বসেছি, ফিরে বলছেন সোমেন
দিলীপবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওখানে সকলের ক্ষোভ পুলিশের উপরে। পুলিশকে ওরা বয়কট করেছে। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে এমন বহিঃপ্রকাশ হতেই পারে।’’ কিন্তু এই ভাষাকে কি তিনি সমর্থন করেন? রাজ্য সভাপতির উত্তর, ‘‘পরিস্থিতির বিচারে এমন কথা বলাই যায়।’’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘তৃণমূল আর বিজেপির ভাষার সংস্কৃতি এক। বিজেপি নেতাকে গ্রেফতার করে ঠিকই করা হয়েছে। একই অপরাধে তৃণমূলেরও কিছু নেতাকে গ্রেফতার করা উচিত।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘রাজনীতিতে এ ধরনের কদর্য ভাষা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মারামারি-কাটাকাটি সমর্থন করি না। যারা অন্যায় করেছে, তাদের বিচার হোক। কিন্তু এটা বিচারের ভাষা নয়।’’