শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল ছবি।
আনুষ্ঠানিক ভাবে নির্বাচন এখনও ঘোষণা হয়নি। তবে ঝাড়খণ্ডে ক্ষমতা ফিরে পেতে এ বার মরিয়া হয়ে ঝাঁপাতে চাইছে বিজেপি। পূর্বাঞ্চলের আরও একটি রাজ্যে সরকার গঠনের পাশাপাশি তাদের নজরে রয়েছে রাঢ়বঙ্গও। সেই রাজনৈতিক লক্ষ্যেই কেন্দ্রের শাসক দলের ‘ঝাড়খণ্ড পরিকল্পনা’য় ভূমিকা থাকছে এ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর।
বিজেপি সূত্রের খবর, ঝাড়খণ্ডের রণকৌশল এবং সাংগঠনিক পরিকল্পনা সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে। সঙ্গে সহকারী হিসেবে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। এই দুই নেতার সঙ্গেই সমন্বয় রেখে চলতে বলা হয়েছে শুভেন্দুকে। চলতি সপ্তাহের গোড়ায় দিল্লি গিয়ে দলে এই সংক্রান্ত এক প্রস্ত আলোচনাও সেরে এসেছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। তার আগে কলকাতায় হিমন্তের পাশাপাশি শুভেন্দুর সঙ্গেও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার (জেএমএম) বিদ্রোহী নেতা ও সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চম্পই সরেন আলোচনা করে গিয়েছেন বলে সূত্রের খবর। বিজেপির তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে অবশ্য ওই বৈঠকের কথা স্বীকার করা হচ্ছে না। আর শুভেন্দু বলেছেন,বিষয়টি শিবরাজ এবং হিমন্তই দেখছেন। প্রসঙ্গত, চম্পই বুধবার জেএমএম ছেড়ে পৃথক দল গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
বাংলার সীমানা লাগোয়া ঝাড়খণ্ড নিয়ে বিজেপির বাড়তি উৎসাহ কেন? বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, জঙ্গলমহল তথা রাঢ়বঙ্গে কুড়মি ভোট উল্লেখযোগ্য। সেই ভোটের ‘নিয়ন্ত্রণ’ মূলত ঝাড়খণ্ডের কুড়মি সমাজের হাতে। এবং তাদের বড় অংশই সচরাচর পড়শি রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে থাকে। শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘ঝাড়খণ্ডে যখন বিজেপির সরকার ছিল, সেই সময়ে ২০১৯ সালে পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরে আমাদের ফল ভাল হয়েছে। সেখানে সরকার চলে যাওয়ার পরে এই এলাকায় আমাদের ফল খারাপ হচ্ছে। অথচ দক্ষিণবঙ্গের অন্য অনেক অংশের তুলনায় এই অঞ্চলে বিজেপির সংগঠন ভাল।’’
কুড়মি ভোটের সূত্রেই ঝাড়খণ্ডের দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছেন শুভেন্দুরা। দলের ওই নেতার বক্তব্য, ‘‘জমি দুর্নীতির অভিযোগে ঝাড়খণ্ডে জেএমএম জোট সরকারের মুখ্যমন্ত্রীকে জেলে যেতে হয়েছে। সরকারের কাজকর্ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভ আছে। বিজেপির সরকার গড়ার পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল।’’ এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ভাবে বিজেপির ভাবনা, ঝাড়খণ্ডে জয় পেলে বাংলা বাদে পূর্বাঞ্চলের সব রাজ্যেই তাদের সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, তখন অসম, ওড়িশা, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড— আশেপাশের সব রাজ্য দিয়ে ‘ঘিরে ফেলে’ ২০২৬ সালে বাংলা দখলের লড়াইয়ে নামতে সুবিধা হবে।
সব ঠিক মতো চললে ঝাড়খণ্ডে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরে। তার জন্য প্রস্তুতি শুরু করছে কংগ্রেস শিবিরও। এআইসিসি-র তরফে স্ক্রিনিং কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গোয়ার প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি গিরিশ চোডানকরকে। কংগ্রেস সূত্রের বক্তব্য, চম্পইয়ের এলাকায় তাঁর জেতার ব্যবধান এবং প্রভাব কমে আসছে কিছু দিন ধরেই। তাঁর এলাকায় শেষ পর্যন্ত জোটসঙ্গী হিসেবে জেএমএমের কাছে আসন চাইতে পারে কংগ্রেস।