বুনিয়াদপুরে কর্মিসভায় তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার। ছবি: অমিত মোহান্ত
করোনাভাইরাস নিয়ে হইচই করা হচ্ছে দিল্লির দাঙ্গা থেকে নজর ঘোরাতে— বুধবার উত্তরবঙ্গের দু’টি জনসভা থেকেই এই মন্তব্য করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘করোনাভাইরাসে মৃত্যু দুঃখজনক। কিন্তু দিল্লিতে যাঁরা মারা গেলেন, তাঁদের কেউ করোনা, ডেঙ্গি বা ম্যালেরিয়ায় মারা যাননি। তাঁদের খুন করা হয়েছে।’’ বিজেপি নেতারা সেই দিল্লি গণহত্যার জন্য এখনও ক্ষমা চাননি— এই অভিযোগ করে এর পরে তিনি দাবি করেন, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে দিল্লির এই গণহত্যার বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাই।
বুধবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বুনিয়াদপুর এবং মালদহের সূর্যাপুরে দু’টি কর্মিসভা করেন মমতা। দু’জায়গাতেই তিনি মূলত বিজেপিকে নিশানা করেন। মমতার বার্তা, দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশে যা হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে তা হতে দেবেন না তিনি। তিনি বলেন, “এখন আবার বাংলায় মিছিল করে গোলি মার স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। বাংলাকে দিল্লি হতে দেব না। গোলি মারার কথা যারা বলেছে তাদের অনেককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও গ্রেফতার করা হবে।”
এই প্রসঙ্গেই ‘বিজেপি ছি ছি’ স্লোগানও দেন মমতা। বিজেপিকে ‘দাঙ্গার নায়ক’ বলে অভিযুক্তও করেন। দাবি করেন, “দিল্লিতে দাঙ্গা নয়, গণহত্যা করা হয়েছে।’’ মমতার দাবি, ‘‘দিল্লিতে প্রচুর মানুষ মারা গিয়েছেন। এখন পর্যন্ত ৫০টির মতো দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও ৭০০ মানুষ নিখোঁজ।’’ তিনি বলেন, ‘‘করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে মনকে সান্ত্বনা দেওয়া যেত। কারণ করোনাভাইরাস রোগের ওষুধ এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু দিল্লিতে গণহত্যার বিষয় মেনে নিতে পারছি না।”
করোনাভাইরাসের কথা মাথায় রেখেই এ দিন হোলি খেলায় রাশ টানার কথা বলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং বিজেপি শীর্ষ নেতারা হোলি খেলবেন না বলে জানিয়েছেন। সেই সূত্রে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘যারা রক্ত নিয়ে হোলি খেলছে, হোলির রং তাদের পছন্দ হওয়ার কথা নয়।’’ একই সুরে এ দিন মমতাও বলেন, ‘‘দিল্লিতে কে দিল গণহত্যার অধিকার? স্লোগান দিচ্ছে গোলি মারো গদ্দারকে! গদ্দার কে? যারা ভাগাভাগি করছে, তারা গদ্দার। যারা ভাঙছে, তারা গদ্দার।’’ উত্তরবঙ্গের আটটি লোকসভা আসনের সাতটিতে বিজেপি জিতেছে। মালদহের দু’টি আসনের একটিতে বিজেপি, অন্যটিতে কংগ্রেস জেতে। বালুরঘাটও জেতে বিজেপি।
অন্য দিকে, মমতার এই অভিযোগের জবাব দিতে গিয়ে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা এবং ডেঙ্গি পরিস্থিতির কথা টেনে এনেছে বিজেপি। উত্তর মালদহের বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, “রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। সেই দিকে নজর না দিয়ে অন্য রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার কথা বলছেন মমতা।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘রাজ্যে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হলে ধামাচাপা দেওয়া হয়। মৃত্যুর শংসাপত্রেও ডেঙ্গির উল্লেখ করা হয় না। মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়টি উত্তরবঙ্গের মানুষ বুঝে গিয়েছেন।”