অযোধ্যার কলস মাথায় নিয়ে হিন্দু জাগরণ মঞ্চের জেলা সংযোজক বাপ্পা বসাক। ২ ডিসেম্বর রাতে ঝাড়গ্রাম স্টেশন চত্বরে। —নিজস্ব চিত্র।
অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনকে সামনে রেখে দেশ জুড়ে জনসংযোগে নেমেছে গেরুয়া শিবির। রাজনৈতিক মহলের কথায়, এর লক্ষ্য লোকসভা ভোট। সেই অঙ্কেই রামের হিন্দু ভাবাবেগের সঙ্গে জঙ্গলমহলের জনজাতি-কুড়মিদের জুড়ে দেওয়ার কৌশল নেওয়া হচ্ছে। রামায়ণের কাহিনি উল্লেখ করেই আদিবাসী ও কুড়মিদের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সনাতন ধর্মের সঙ্গে তাঁদের যোগসূত্রের কথা।
পরিকল্পনা মতোই জঙ্গলমহলের জেলা ঝাড়গ্রামেও রামমন্দির দর্শনের আমন্ত্রণপত্রের সঙ্গে ৫ থেকে ৭ গ্রাম চালের ছোট প্যাকেট, অযোধ্যার মন্দির আর রাম-লক্ষ্মণ-সীতা-হনুমানের ছবি বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেবে সঙ্ঘ।। অযোধ্যা থেকে ঘি-হলুদ মাখানো আতপ চাল ভর্তি পিতলের কলস ইতিমধ্যেই জেলায় চলে এসেছে। ঝাড়গ্রাম জেলায় সঙ্ঘের প্রমুখ কার্যকর্তা বলছেন, ‘‘১-১৫ জানুয়ারি জেলার এক লক্ষ পরিবারের কাছে আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে। যাঁরা পৌঁছে দেবেন, সেই টোলিতে আদিবাসী-কুড়মি ভাই-বোনেরাও থাকবেন।’’
জঙ্গলমহলে জনজাতি ও কুড়মিদের সংখ্যাধিক্য রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখেই এখানে রামায়ণের নিষাদরাজ গুহকের কথা মনে করিয়ে দেয় সঙ্ঘ। উপজাতি রাজা গুহক ছিলেন রামের বাল্যসখা। সেই সঙ্গে বলা হয় সিদো-কানহোর আত্মত্যাগের কাহিনি। পাশাপাশি, কুড়মিদের উদ্বুদ্ধ করতে বলা হচ্ছে, বেশির ভাগ কুড়মির বাড়িতে তুলসীতলা থাকে। মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানে ‘হরিবোল’ ধ্বনি দেওয়া হয়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কথায়, আদিবাসী ও কুড়মিদের হিন্দু হিসাবে এক ছাতার তলায় নিয়ে আসার যাবতীয় আয়োজনই করছে সঙ্ঘ। সম্প্রতি পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের উদাহরণ দিয়ে তাঁরা বলছেন, দেখা যাচ্ছে, একাধিক রাজ্যে আদিবাসীরা বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে গত বিধানসভা নির্বাচনে এই আদিবাসীরাই বিজেপি থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনে যাতে তা না হয়, সেই লক্ষ্যেই নেমেছে গেরুয়া শিবির। সে জন্য প্রায় সব শাখাই কাজ করছে।
সঙ্ঘের এক কার্যকর্তা জানাচ্ছেন, ঝাড়গ্রাম জেলায় ১৭টি শাখা কাজ করছে। এর মধ্যে চারটি শাখা শুধু আদিবাসী এলাকার দায়িত্বে। সেই সব শাখাকে কাজে লাগিয়েই অযোধ্যা থেকে আসা চাল ভাগ করে একশোটি মাটির কলসিতে ভরা হবে। তার পর জেলার ৭৯টি অঞ্চলে একটি করে ও ঝাড়গ্রাম শহরের জন্য একটি কলসি পাঠানো হবে। বাকি কলসি দেওয়া হবে বিভিন্ন মঠ ও মন্দিরে।
সঙ্ঘ সূত্রে জানা গিয়েছে, রামমন্দির তৈরির জন্য ঝাড়গ্রাম জেলার প্রায় ৬০ হাজার বাড়ি থেকে সরাসরি অর্থ সংগ্রহ করা হয়েছিল। অনলাইনেও জেলার অনেকে অর্থ দেন। মন্দিরের জন্য অর্থ সাহায্য করেছেন, এমন এক লক্ষ বাড়িতে আমন্ত্রণপত্র দেওয়া হবে। প্রাপকদের মধ্যে আদিবাসী ও কুড়মি পরিবারও রয়েছে। আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেওয়ার জন্য চার-পাঁচ জনের যে এলাকাভিত্তিক ‘টোলি’ গঠন করেছে সঙ্ঘ, সেই দলেও জনজাতি-কুড়মিরা থাকবেন।
গেরুয়া শিবিরের এই কর্মসূচি নিয়ে আদিবাসী যুব সংগঠন ‘ভারত জাকাত মাঝি মাডওয়া জুয়ান গাঁওতা’র সাধারণ সম্পাদক প্রবীর মুর্মু বলছেন, ‘‘ধর্মীয় আমন্ত্রণপত্র যে কেউ যে কাউকে দিতে পারেন। যে যার মতো ধর্মাচরণও করতে পারেন। তবে ধর্মের নামে রাজনীতি ও জবরদস্তি কাম্য নয়।’’ কুড়মি সমাজ (পশ্চিমবঙ্গ)-এর রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতোরও মতে, ‘‘ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে যে যার মতো ধর্মাচরণ করবে। এই নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে সরব তৃণমূল। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গীর দাবি, ‘‘জঙ্গলমহলে হিন্দুত্বের তাস খেলার চেষ্টা করছে গেরুয়া শিবির।’’ জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু পাল্টা বলছেন, ‘‘তিন রাজ্যে বিজেপির বিপুল জয়ের পরে তৃণমূল এখন দিশাহারা। তাই ওরা কেবল হিন্দুত্বের তাস দেখতে পাচ্ছে।’’