শুক্রবার কৃষ্ণনগরে জয়প্রকাশ ও দিলীপ। নিজস্ব চিত্র।
মুকুল রায় কৃষ্ণনগর উত্তরের বিধায়ক পদ ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজেপি কি রাজ্য নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারকে সেখানে প্রার্থী করার কথা ভাবছে? এমন জল্পনা কিছুদিন ধরেই শুরু হয়েছে বিজেপি-র অন্দরে। জল্পনার সূত্রপাত, তৃণমূলে মুকুলের যোগদেওয়ার পর থেকে। এক সময়ে শোনা গিয়েছিল,তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর মুকুল বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। তাঁর জায়গায় ওই আসনে লড়তে পারেন মুকুলের ছেলে, বীজপুরের প্রাক্তন বিধায়কশুভ্রাংশু। যদিও সেটা তৃণমূলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু মুকুল ইস্তফা দিলে সেই ফাঁকা আসনে বিজেপি-র প্রার্থী কে হবে?সেখানেই জয়প্রকাশের নাম ভাবা হচ্ছে। কারণ, একটা সময়ে এই নদিয়ারই করিমপুরে উপনির্বাচনে দাঁড়িয়ে ছিলেন জয়প্রকাশ। যদিও হেরেছিলেন। আর সে জল্পনাতেই ঘৃতাহুতি দিয়েছে শুক্রবার রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ কৃষ্ণনগরে সাংগঠনিক বৈঠকে দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশকে নিয়েযাওয়ায়।
সম্প্রতি বেশ কয়েকবার জয়প্রকাশ কৃষ্ণনগরে যাওয়াতে দলের মধ্যে এমনিতেই আলোচনা শুরু হয়। মুকুল তৃণমূল যোগ দিয়েছেন ঠিক এক সপ্তাহ আগে, গত শুক্রবার।মাঝের সাতদিনে বার তিনেক ওই আসনে ঘুরে এসেছেন জয়প্রকাশ। তবে কৃষ্ণনগরের সঙ্গে পুরনো সম্পর্ক রয়েছে জয়প্রকাশের। তাঁর বাবা জগন্নাথ সরকার এখান থেকে কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। তখন অবশ্য কৃষ্ণনগর একটিই আসন ছিল। এই জেলার সঙ্গে সাম্প্রতিক সম্পর্কও রয়েছে জয়প্রকাশের। ২০১৯ সালে তৃণমূলের মহুয়া মৈত্র করিমপুর আসনের বিধায়ক পদ ছেড়ে সাংসদ হন। তার পরে উপনির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন জয়প্রকাশ। তবে হেরেছিলেন প্রায় ২৪ হাজার ভোটে। প্রসঙ্গত, সেই সময় করিমপুরের পিপুলখোলায় জয়প্রকাশকে রাস্তায় ফেলে কিল-চড়ের পাশাপাশি লাথি মেরে ঝোপের ভিতর ফেলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
উপনির্বাচনে জয়প্রকাশের প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ইতিমধ্যেই নদিয়া জেলায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে মুকুলকে প্রার্থী করা নিয়েও স্থানীয় নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ ছিল। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে রাজ্যে যে ক’টি আসন বিজেপি-র কাছে ‘অতি সুবিধাজনক’ হিসেবে চিহ্নিত ছিল তার মধ্যে একটি ছিল কৃষ্ণনগর উত্তর। লোকসভা আসনে তৃণমূল জিতলেও এই বিধানসভা এলাকায় বিজেপি এগিয়ে ছিল ৫৩,৫৫১ ভোটে। যদিও মুকুল জিতেছেন ৩৫,০৮৯ ভোটে। কৃষ্ণনগরে বিজেপি-র সংগঠনও অনেকটাই পুরনো। দীর্ঘকাল সিপিএমের জেতা আসনে ১৯৯৯ সালে লোকসভা ভোটে জিতেছিলেন বিজেপি-র সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। জেলা বিজেপি নেতাদের দাবি, তখন থেকেই এখনে সংগঠন মজবুত।
মুকুল ওই আসনের বিধায়ক পদ ছাড়বেন কিনা তা নিয়ে এখনও কিছুই বলেননি। যদিও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শুক্রবারই বিধানসভার স্পিকারের কাছে মুকুলের বিরুদ্ধে দলত্যাগ বিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। স্পিকার সেই আবেদন গ্রহণ করবেন কিনা, কার্যকর করবেন কিনা, মুকুল নিজের থেকে পদত্যাগ করবেন কিনা এমন অনেক প্রশ্ন রয়েছে। অনেক ‘যদি’ বাস্তবায়িত হওয়ার উপরে নির্ভর করছে কৃষ্ণনগর উত্তরে উপনির্বাচনের সম্ভাবনা। তবে এখন থেকেই প্রার্থী নিয়ে যাতে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ না হয় তার প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। রাজ্য নেতৃত্বের কেউ কেউ বলছেন, অন্য শিবিরের কেউ যাতে প্রার্থী হতে না পারেন সে জন্য প্রিয় জয়প্রকাশকে এগিয়ে রাখছেন দিলীপ। এক বিজেপি নেতার রসিক কটাক্ষ, ‘‘জয়প্রকাশ হলেন রাজ্য বিজেপি-র ‘স্থায়ী’ উপনির্বাচনের প্রার্থী। বিধানসভায় সম্ভবত সেই কারণেই টিকিট দেওয়া হয়নি।’’