প্রতীকী ছবি।
শুধু নেতিবাচক প্রচার নয়, বিধানসভা ভোটের আগে নিজেদের পরিকল্পনা সম্পর্কে ‘ইতিবাচক’ ধারণা তৈরির লক্ষ্যে মননশীল সমাজের কাছে পৌঁছতে চাইছে বিজেপি। তার জন্য নতুন বছরের গোড়াতেই ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিটিতে অন্তত একটি করে আলোচনাসভা করবে তারা। সেখানে ‘সোনার বাংলা’ শব্দবন্ধকে সামনে রেখে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কর্মসংস্থান, অর্থনীতি, সংস্কৃতি-সহ রাজ্য এবং দেশ গঠনের নানা দিক সম্পর্কে দলের মতাদর্শ তুলে ধরা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষিত, সচেতন মানুষের সামনে।
আলোচনাসভাগুলির আয়োজনে থাকবে বিজেপির বিদ্বজ্জন সেল। বিধানসভা ভোটের লক্ষ্যে দলের এই উদ্যোগের পোশাকি নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইন্টেলেকচুয়াল আউটরিচ’।বিজেপি সূত্রের খবর, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব গত দু’বছর ধরেই বার বার রাজ্য নেতাদের বিদ্বজ্জন সমাজে যোগাযোগ বাড়াতে বলেছেন। কিন্তু রাজ্য বিজেপির তরফে তেমন কোনও তৎপরতা দেখা যায়নি। বরং, দলের অন্দরে চর্চা হত— রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের ‘উগ্র’ কথাবার্তায় বিদ্বজ্জনেরা অসন্তুষ্টই হন। দিলীপবাবুও পাল্টা বলতেন, বিদ্বজ্জনেরা যা-ই বলুন, আমজনতা তাঁর ওই সব কথাই পছন্দ করে এবং ভোটের ময়দানে তারাই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্য বিজেপির রাশ যখন কার্যত দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হাতে চলে গিয়েছে, তখন বিদ্বৎ-সমাজের কাছে পৌঁছতে বাড়তি সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে রাজ্য নেতাদের মধ্যে। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে রয়েছেন দলের সর্বভারতীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) শিবপ্রকাশ, রাজ্য দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী, রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধিকর্তা অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায়, বিদ্বজ্জন সেলের আহ্বায়ক রন্তিদেব সেনগুপ্ত-সহ কয়েক জন।
বিজেপির এক রাজ্য নেতার কথায়, ‘‘বর্তমান শাসকের নিন্দা তো দলীয় রাজনীতির সব ক্ষেত্রেই করা হচ্ছে। কিন্তু এখন আমরা শাসক হওয়ার লক্ষ্যে লড়ছি। তাই আমরা কী করতে চাই, সেটাও আমাদের মানুষকে জানানো দরকার। বিজেপির একটা সামগ্রিক মতাদর্শ আছে। সেটা আমরা পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কী ভাবে রূপায়ণ করব, তা প্রচার করার জন্যই ইন্টেলেকচুয়াল আউটরিচের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।’’ বিজেপি-আরএসএসের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, অর্থনীতি পশ্চিমবঙ্গে কী ভাবে রূপায়ণ করা যাবে, তা নিয়ে ওই ক্ষেত্রগুলির গেরুয়া শিবিরের বিদগ্ধ জনেরা এখন চর্চা করছেন। পরে সেগুলো থেকেই তৈরি হবে দলের ‘ভিশন ডকুমেন্ট’। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে লেখা হবে নির্বাচনী ইস্তাহার, যেখানে তুলে ধরা হবে ভোটে জিতলে প্রথম পাঁচ বছরে বিজেপি কী করবে, সেই প্রতিশ্রুতি।
এ সবেরই প্রাথমিক ধাপ হিসাবে আগামী ১ থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে রাজ্যের সব ক’টি বিধানসভা কেন্দ্রে অন্তত একটি করে বিদ্বজ্জন-সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। দলের বিদ্বজ্জন সেলের আহ্বায়ক রন্তিদেববাবু বলেন, ‘‘বিজেপি সমাজের সমস্ত মননশীল মানুষের কাছে পৌঁছতে চাইছে। তাই তার জন্য বিদ্বজ্জন সেল উপযুক্ত কর্মসূচি নিচ্ছে।’’