স্মরণ: সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীতে শ্রদ্ধা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বৃহস্পতিবার দার্জিলিং ম্যালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
বিজেপির অন্তরে নেতাজি নেই, বরং তারা সুভাষচন্দ্র বসুর ভাবধারাকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে—দার্জিলিং ম্যালে নেতাজির জন্মজয়ন্তী পালনের সময়ে এমনটাই বুঝিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, নেতাজি হিন্দু মহাসভার ভাবধারার বিরোধী ছিলেন। আর কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পরে তাদের উত্তরসূরি বিজেপি একে একে নেতাজির ভাবনাগুলিকেই মুছে দিচ্ছে।
সুভাষচন্দ্রের ১৯৪০ সালের একটি বক্তৃতার প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘সে সময় নেতাজি সত্যি কথা বলেছিলেন। তখন বিজেপির এক সংগঠন হিন্দু মহাসভা ছিল। এখনও যার ধারা চলছে। তিনি বলেছিলেন, ভোটে দখলদারি করার জন্য তারা লড়াই করছে। আমি সেটাকে সমর্থন করি না। নিন্দা করি।’’ একই সূত্রে যোজনা কমিশন আর আজাদি স্লোগানেরও উল্লেখ করেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘নেতাজি বলেছিলেন, তোমরা আমায় রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। আর আজ যা চলছে, তা হল— আজাদি ভুলে যাও, লোকতন্ত্র ভুলে যাও।’’
সুভাষচন্দ্র বসু কতটা ধর্মনিরপেক্ষ নেতা ছিলেন, তার উদাহরণ দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজাদ হিন্দ ফৌজে নেতাজির সঙ্গী ছিলেন শাহনওয়াজ খান।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যিনি সবার ভাবনা, সব ধর্ম, জাতিকে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেন, তিনিই নেতা।’’
আরও পড়ুন: ভরসা অবিজেপি মুখ্যমন্ত্রীরাই, বলছেন অরুন্ধতী
এ দিন কলকাতায় এক প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমও বলেন, ‘‘যিনি এক দিকে হিন্দু অন্য দিকে মুসলমান সঙ্গী নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ চালাতেন, তিনি থাকলে এনআরসি বা সিএএ হত না।’’ যদিও এর জবাবে বিজেপি নেতা সায়ন্তন বসু বলেন, ‘‘নেতাজি থাকলে দেশটাই ভাগ হত না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কংগ্রেস, সিপিএম (স্বাধীনতার সময়ে অবশ্য সিপিএম তৈরি হয়নি) এবং মুসলিম লিগ মিলে দেশটা ভাগ করেছে।’’
সুভাষচন্দ্রের ঘিরে দিনভর এই রাজনৈতিক তরজায় মমতার এ দিনের বক্তৃতা ছিল সংক্ষিপ্ত। তবে পুরো বক্তৃতা জুড়েই তিনি বিজেপি নেতৃত্বকে বিঁধেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘নেতাজি হিন্দু, মুসলিম, শিখ, গোর্খা— সকলের কথাই বলেছেন। অথচ এখন যা চলছে, তাতে হিন্দু ধর্মের বদনাম করা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: দেখাব না কাগজ, বহু দেবস্মিতার একই স্বর
দার্জিলিঙের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী ভাবনাচিন্তা না করেই কথা বলছেন। কেন্দ্রের নীতি আয়োগ রয়েছে। তা পরিকল্পনা করছে। নেতাজি দেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছিলেন। যাঁরা ভারতের বিরুদ্ধে, তাঁরাই ছিলেন নেতাজির শত্রু। বিজেপিও সেটাই ভাবে। নেতাজির পথেই আমরা চলেছি।’’