হাতে-হাতে: লক্ষ্মীসাগরে বিজেপির জেলা সভাপতি। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির মঞ্চ থেকে উজ্জ্বলা প্রকল্পে গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার ঘটনাকে ঘিরে বিতর্ক তৈরি হল সিমলাপালে।
রবিবার বিজেপির সিমলাপাল ২ মণ্ডলের মহিলা মোর্চার নেতৃত্বে সিমলাপালের লক্ষ্মীসাগর সেন্টার মোড়ে উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগ বিলি করা হয়। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির বাঁকুড়া জেলা সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র, জেলা মহিলা মোর্চার সভানেত্রী মণিকা দত্ত, সিমলাপাল ২ মণ্ডল সভাপতি আলোকবিকাশ হোতা ও সিমলাপাল ২ মণ্ডলের মহিলা মোর্চার সভানেত্রী অনুশ্রী কুচলান প্রমুখ। আলোকবিকাশবাবু দাবি করেন, ‘‘এলাকার বিপিএল তালিকাভুক্ত ৫৫ জন মহিলাকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস-সহ আভেন দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে প্রাথমিক পর্বে। তবে এ দিন অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে ১০ জন মহিলার হাতে গ্যাস ও আভেন তুলে দেওয়া হয়। বাকিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে দলীয় কর্মীরা সেগুলি
পৌঁছে দেবেন।’’
এখানেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বাঁকুড়া জেলার গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরেরা জানাচ্ছেন, ২০১৬ সালে উজ্জ্বলা প্রকল্পে সম্ভাব্য উপভোক্তাদের নামের তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেই অনুযায়ী গ্রাহকেরা নিজেরা উপযুক্ত নথি-সহ ডিস্ট্রিবিউটরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ‘সিকিউরিটি’-র টাকা বাদ দিয়ে সরাসরি ডিস্ট্রিবিউটরের কাছ থেকে তাঁরা গ্যাসের সংযোগ নিচ্ছেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রকল্পে উৎসাহ দিতে ডিস্ট্রিবিউটরের তরফে গ্রামে গ্রামে শিবির করে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, ইদানীং জেলার কিছু জায়গায় বিজেপি নেতারা স্থানীয় ভাবে ডিস্ট্রিবিউটরের উপস্থিতিতে দলীয় কর্মসূচির মোড়কে উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগ দিচ্ছেন।
এ দিনও সিমলাপালে সেটাই হয়েছে বলে তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ। তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের দাবি, গেরুয়া কাপড়ে মোড়া মঞ্চের চারপাশে বিজেপির দলীয় পতাকা টাঙানো ছিল। ছিল দলের মহিলা সংগঠনের ব্যানার। সেখান থেকে গ্যাসের সংযোগ তুলে দেন বিজেপির পরিচিত নেতারা। কী ভাবে এমন জায়গায় সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
তৃণমূলের বাঁকুড়া সংসদীয় সভাপতি শুভাশিস বটব্যাল দাবি করেন, ‘‘রাজ্য সরকারের অগুনতি জনমুখী প্রকল্প রয়েছে, যার আশপাশে কেন্দ্রীয় সরকার আসতেই পারবে না। অথচ সেই সব প্রকল্পে কখনও আমরা রাজনৈতিক ছাপ লাগাইনি। বিজেপি উজ্জ্বলা গ্যাস বিলি করা নিয়ে যা করছে, তার থেকে ন্যক্কারজনক ঘটনা আর হয় না।’’
যদিও বিজেপির বাঁকুড়া সাংগঠনিক সভাপতি বিবেকানন্দ পাত্র দাবি করেন, ‘‘আমরা মোটেও সরকারি প্রকল্পটিকে ভোটের হাতিয়ার করছি না। বহু ন্যায্য উপভোক্তাকে তৃণমূলের লোকজন এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে দিচ্ছেন না। অনেক ক্ষেত্রে বিনামূল্যে গ্যাস পাইয়ে দেওয়ার নাম করে তৃণমূলের লোকেরা উপভোক্তাদের কাছ থেকে দু’শো, তিনশো, পাঁচশো এমনকি হাজার টাকাও কাটমানি নিচ্ছে। আমরা আন্দোলন করে উপভোক্তাদের সেই অধিকার পাইয়ে দিচ্ছি।’’ তাঁর আরও দাবি, ডিস্ট্রিবিউটরের লোকের উপস্থিতিতেই এ দিনের গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। কোনও অন্যায় করা হয়নি।
সিমলাপাল ব্লক তৃণমূলের সভাপতি রামানুজ সিংহ মহাপাত্রের দাবি, ‘‘উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্পের সঙ্গে আমাদের দলের কোনও কর্মী-সমর্থক জড়িত নয়। এই গ্যাস নিয়ে দুর্নীতিতে বিজেপিরই কিছু নেতা-কর্মী জড়িত।’’