দিলীপ ঘোষ। ফাইল চিত্র।
সরাসরি ভর্ৎসনা না করলেও দিলীপ ঘোষকে আরও এক বার সংবাদ মাধ্যমে মুখ খোলার ক্ষেত্রে ‘সংযমী’ ও ‘সাবধানী’ হওয়ার বার্তা দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা। সোমবার গভীর রাতে দুজনের মধ্যে ফোন মারফত কথা হয়। দিলীপের দাবি, তিনি কোন প্রেক্ষাপটে সিবিআই সম্পর্কে কথাগুলি বলেছেন, তা জানিয়েছেন। সব শুনে নড্ডা তাঁকে আরও ‘সাবধানী’ ও ‘সংযমী’ হয়ে কথা বলার জন্য বলেছেন, যাতে না প্রচারমাধ্যম বা বিরোধী দল এই সুযোগ ‘কাজে লাগিয়ে’ বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে।
যদিও এর পরেও দিলীপের থামার লক্ষণ নেই। শ্রীরামপুরে মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘সিবিআই নিয়ে প্রকাশ্যে ক্যামেরার সামনে বলেছি। যেটা বাস্তব দেখেছি, সেটা বলেছি। সিবিআই অফিসারদের একাংশ সেটিং করছে কি না, বলতে পারব না। আমি সিবিআই চালাই না। আমরা ন্যায় চাইতে গিয়েছিলাম। পাইনি, তাই বলেছি।’’ একই সঙ্গে দলের ঐক্যের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য, “আমার প্রশংসা করতে গিয়ে, আমাদের মধ্যে বিভেদ আনার চেষ্টা করছে। আমরা নিন্দা, প্রশংসার ধার ধারি না। ভারতীয় জনতা পার্টি একটাই। আমাদের রাজ্য সভাপতির নেতৃত্বে সেই পার্টি চলছে। আমরা সবাই সহযোগিতা করার জন্য আছি। এ ভাবেই আমাদের বিজেপি চলবে। সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বসে রুটি খাই। তিন জনকে একসঙ্গে হাঁটতে হবে, একতা দেখানোর জন্য! আমাদের তা দেখাতে হয় না।’’বিতর্কের সূত্রপাত রবিবার। ওই দিন কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ মন্তব্য করেন, “এই রাজ্যে সিবিআই সেটিং করে নিয়েছে।” এমনকি, সিবিআই আধিকারিকদের একাংশ পেট চালাতে লাখ এমনকি, কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেন। সেই সঙ্গে ইডিকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, “সব কুকুর পোষ মানে না। কিছু কুকুর কামড়েও দেয়!”
দিলীপের এই মন্তব্য নিয়ে ঝড় ওঠে রাজ্য রাজনীতিতে। রটে যায় ক্ষুব্ধ শীর্ষ নেতৃত্ব এই বিষয়ে দিলীপের জবাবদিহি চেয়েছেন। এমনকি, দিলীপের মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে রিপোর্টও তলব করা হয়েছে। বিভ্রান্তি তৈরি হওয়ায় সোমবার রাতে বিজেপির কোর কমিটির বৈঠকের শেষে রাজ্যের সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয় কথা বলেন দিলীপের সঙ্গে। দিলীপের দাবি, মালবীয় তাঁকে বলেছেন অযথা সিবিআই আধিকারিকদের আক্রমণ করে কী হবে, প্রচারমাধ্যম এটা নিয়ে জলঘোলা করবে। পাল্টা দিলীপ বলেন, “ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে আমাদের ৫৭ জন কর্মী খুন হয়েছেন। আমরা আদালতে গিয়েছিলাম। আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু সিবিআই এক জনকেও গ্রেফতার করতে পারেনি। শহিদ পরিবারগুলির কাছে তো আমাদের মুখ দেখাতে হবে। আমরা তা হলে কাকে বলব?’’এর পরেই মালবীয়ের ফোন থেকে নড্ডার সঙ্গে কথা বলেন দিলীপ। তখনই তাঁদের মধ্যে ওই কথোপকথন হয় বলে দিলীপ দাবি করেছেন। তবে সোমবারের মতো এ দিনও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত বলেন, ‘‘আমার কাছ থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এই বিষয়ে কোনও রিপোর্ট তলব করেননি।’’
যদিও এ দিন রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “এটা তো ঠিক যে, ভোট-পরবর্তী সন্ত্রাসে আমাদের কর্মীদের খুন হতে হয়েছে। এখনও তার কোনও বিচার হয়নি। তবে এ রাজ্যে সিবিআই পদে পদে রাজ্য সরকারের অসহযোগিতা পেয়েছে। আমরাও চাই সিবিআই দ্রুত এই তদন্ত শেষ করুক। দোষীরা শাস্তি পাক।”