বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে দলের ফল পর্যালোচনা করে এবং লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রস্তুতিকে মাথায় রেখে জেলা নেতৃত্বে রদবদল করল বিজেপি। এ বার দলের সংগঠনেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রভাব কার্যত আরও স্পষ্ট হল। মোট ১৭টি জেলার সভাপতি পদে রদবদল করেছে বিজেপি, যেখানে জেলার নেতৃত্বে জায়গা পেয়েছেন শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠ একাধিক বিধায়ক। বিজেপির পরিষদীয় দলের তরফে অনেক সয়েই অভিযোগ করা হয়েছিল, সংগঠনের কাজে জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। লোকসভা ভোটের আগে সংগঠনের সঙ্গে পরিষদীয় দলের সেতু গড়ে দেওয়ার চেষ্টা হল বলেই বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা। দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের বক্তব্য, সাংগঠনিক কাজে কে কতটা ‘সক্রিয়’, তা বিবেচনায় রেখেই রদবদল করা হয়েছে।
রাজ্য বিজেপির তরফে রবিবার জেলা সভাপতিদের যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে, ১১টি জেলার সভাপতি পদে নতুন মুখ আনা হয়েছে। এ ছাড়াও তিনটি জেলা ভেঙে ৫টি নতুন সাংগঠনিক জেলা করা হয়েছে। আর কিছু দিন আগেই ডায়মন্ড হারবার জেলা সভাপতি পদে বদল করা হয়েছিল। সব মিলিয়ে ১৭টি সাংগঠনিক জেলায় নতুন সভাপতি এনেছে বিজেপি।
রদবদলের জেরে আলিপুরদুয়ার জেলার সভাপতি পদে আনা হয়েছে বিধানসভায় বিরোধী দলের সচেতক মনোজ টিগ্গাকে। হলদিয়ার বিধায়ক তাপসী মণ্ডলকে তমলুক, কাঁথি দক্ষিণের বিধায়ক অরূপ কুমার দাসকে কাঁথি, ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখাকে বিষ্ণুপুর, পুরশুড়ার বিধায়ক বিমান ঘোষকে আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিলিগুড়ি, আসানসোল, হাওড়া সদর, মথুরাপুর, বারাসত সাংগঠনিক জেলারও সভাপতি পদে পরিবর্তন হয়েছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে মণ্ডল স্তরে সাংগঠনিক রদবদল শুরু করেছে বিজেপি। তার সূত্র ধরেই জেলা নেতৃত্বেও পরিবর্তন আনা হল। বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে বারেবারেই বলেছেন, পঞ্চায়েত ভোটে ‘সন্ত্রাস, ভোট লুট ও গণনায় কারচুপি’র মধ্যেও বিজেপি যত আসন পেয়েছে, তা অভাবনীয়। কিন্তু সাংগঠনিক স্তরে ত্রুটি-বিচ্যুতি খতিয়ে দেখে মণ্ডল ও জেলা নেতৃত্বে বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, যে জেলাগুলিতে দলের প্রার্থীদের মনোনয়ন উপযুক্ত সংখ্যায় হয়নি বলে রাজ্য নেতৃত্ব মনে করছেন, সেই জেলা সভাপতিদের উপরে ‘কোপ’ পড়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সংগঠনকেও ঢেলে সাজার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সংখ্যা ছিল ৪২, এখন হল ৪৪। দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলা ভেঙে যাদবপুর সাংগঠনিক জেলা তৈরি হয়েছে। দুই জেলার নতুন সভাপতি হয়েছেন যথাক্রমে অনুপম ভট্টাচার্য ও কুন্তল চৌধুরী। মুর্শিদাবাদ উত্তর ও দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা ভেঙে মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর ও জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা তৈরি হয়েছে। কলকাতা উত্তর শহরতলি সাংগঠনিক জেলা থেকে দু’টি বিধানসভাকে বারাসত সাংগঠনিক জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘অনেকগুলো মাপকাঠি মাথায় রেখেই রদবদল করা হয়েছে। প্রত্যেকের ‘পারফরমেন্স’ আমরা আতস কাঁচের তলায় রেখে বিশ্লেষণ করেছি। যেখানে প্রয়োজন হয়েছে, সেখানে নেতৃত্ব বদল হয়েছে। আমরা জেলা সভাপতি ও পদাধিকারীদের গত দু’বছরের কাজের পর্যালোচনা করেছি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁদের কী ভূমিকা ছিল, খতিয়ে দেখেছি। সংগঠনে তিনি কতটা সক্রিয়, সেই বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়েছে।’’