প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর এবং কুৎসিত’ মন্তব্যের অভিযোগে মোট ৬০ জন তৃণমূল বিধায়ককে চিহ্নিত করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। ছবি: পিটিআই।
বিধানসভাকাণ্ডে আবার অভিযোগ হেয়ার স্ট্রিট থানায়। তৃণমূলের ‘জবাবে’ বিজেপির। জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননার অভিযোগের পরে এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ‘চোর’ বলার অভিযোগে।
মঙ্গলবার জলপাইগুড়ির ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিজেপি বিধায়ক শিখা চট্টোপাধ্যায় এবং কোচবিহার জেলার তুফানগঞ্জের বিজেপি বিধায়ক মালতি রাভা রায় দু’টি পৃথক অভিযোগ দায়ের করেন হেয়ার স্ট্রিট থানায়। তবে দুই অভিযোগের বয়ানই এক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে ‘অবমাননাকর এবং কুৎসিত’ মন্তব্যের অভিযোগে মোট ৬০ জন তৃণমূল বিধায়ককে চিহ্নিত করা হয়েছে অভিযোগপত্রে। সঙ্গে রয়েছে ‘অন্যান্য’ অভিযুক্তদের উল্লেখও।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এক্স হ্যান্ডলে সেই অভিযোগপত্র পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘আমি এই সব অপরাধীকে জানিয়ে দিতে চাই, এক দিন এই অসম্মানজনক আচরণের জন্য আপনাদের সকলকে শাস্তি পেতে হবে। শুধু কিছু দিনের অপেক্ষা।’’
অভিযুক্ত তৃণমূল বিধায়কদের তালিকায় সুজিত বসু, বাবুল সুপ্রিয়, ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, রথীন ঘোষ, বিপ্লব রায়চৌধুরী, মন্টুরাম পাখিরার মতো মন্ত্রীদের নামও রয়েছে। প্রসঙ্গত, গত বুধবার শহরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহের সভার দিনে বিধানসভার ভিতরে ও বাইরে মমতার নেতৃত্বে বিজেপিকে নিশানা করেছিলেন তৃণমূল বিধায়কেরা। দিনের অধিবেশন শেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা যোগ দেন বিধানসভা চত্বরে অম্বেডকর মূর্তির নীচে তৃণমূল পরিষদীয় দলের ধর্না কর্মসূচিতে।
মুখ্যমন্ত্রীর এক পাশে ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং অন্য পাশে মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। পালা করে তাঁরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, ‘‘অমিত চোর! মোদী চোর! বিজেপির সবাই চোর।’’ তখন বিধানসভায় কোনও বিজেপি বিধায়কই ছিলেন না। সকলেই ছিলেন ধর্মতলার সভামঞ্চের আশপাশে। শুভেন্দু ছিলেন শাহের সঙ্গে। তিনি এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার শাহকে রেসকোর্স হেলিপ্যাড পর্যন্ত এগিয়ে দেন। শাহ বিমানবন্দরে রওনা হতেই নিজের বিধানসভার দফতরে ফোন করেন বিরোধী দলনেতা। বিধানসভার পরিস্থিতি প্রসঙ্গেও জানতে চান তিনি। তাঁকে জানানো হয়, বিধানসভা চত্বরে ধর্না দিচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং।
সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি মোদী-শাহকে ‘চোর’ বলে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুব্ধ শুভেন্দু জানান, তিনি বিধানসভায় আসছেন! এসে পাল্টা কর্মসূচিও করবেন। এর পর কয়েক জন বিজেপি বিধায়কের সঙ্গে বিধানসভা চত্বরে এসে তৃণমূল বিধায়কদের উদ্দেশে পাল্টা স্লোগান দেন শুভেন্দু। অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন ধর্নায় উপস্থিত বিধায়কদের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে কর্মসূচি শেষ করতে বলেন, তখনই শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপির বিধায়কেরা ‘চোর চোর’ বলে স্লোগান দিয়ে ওঠেন।
শুধু তা-ই নয় বিজেপির বিধায়কেরা ওই সময় রীতি মেনে উঠেও দাঁড়াননি। যা নিয়ে শুভেন্দু-সহ ১২ বিধায়কের বিরুদ্ধে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয় তৃণমূলের তরফে। সোমবার কলকাতা হাই কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে, জাতীয় সঙ্গীত অবমাননা মামলায় অভিযুক্ত বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না। শুভেন্দুর নেতৃত্বে তৃণমূল বিধায়কের ‘মমতা চোর’ লেখা টি-শার্ট পরে বিধানসভায় বিক্ষোভ দেখানোয় রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এর আগে তাঁদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।