ফাইল চিত্র।
আগামী অন্তত এক মাস দলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলায় ঘুরে সেখানকার নেতা-কর্মীদের পাশে আনার চেষ্টা করবেন রাজ্য বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ শিবিরের নেতারা। আর ওই শিবিরের মুখ হয়ে ওঠা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর করবেন ‘সাংসদ সম্পর্ক যাত্রা’। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন পর্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভের উত্তাপ বজায় রাখতেই তাঁদের এই উদ্যোগ বলে মনে করছে বিজেপির একাংশ।
রাজ্য বিজেপি-র পদাধিকারীমণ্ডলী এবং জেলা সভাপতিদের মধ্যে মতুয়া প্রতিনিধি না থাকায় শান্তনু এবং দলের কয়েক জন মতুয়া বিধায়ক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পরিবর্তন-সহ সংগঠনে এক গুচ্ছ বদলের দাবিও তুলেছেন তাঁরা। পাশাপাশি, রাজ্য বিজেপির নতুন পদাধিকারীমণ্ডলীতে সিংহভাগ পুরনো নেতা বাদ পড়াতেও দলের একাংশ ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ভাবে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়ে যে কমিটি তৈরি হয়েছে, তার পক্ষে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়ে ভোটে জেতা সম্ভব নয়। এই দুই অংশের ক্ষোভ এক সূত্রে গাঁথতে গত বেশ কিছু দিন ধরে একের পর এক বিক্ষিপ্ত বৈঠক হয়েছে কখনও শান্তনু, কখনও ‘বিক্ষুব্ধ’ গোষ্ঠীর আর এক নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের বাড়িতে। দলের সব ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাকে এক ছাতার তলায় আনতে গত শনিবার পোর্ট ট্রাস্টের অতিথিশালায় শান্তনু, জয়প্রকাশ, সায়ন্তন বসু, রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়, রীতেশ তিওয়ারি প্রমুখ বৈঠক করেন। ওই দিন থেকেই শুরু হয় বিজেপির পোস্টার-যুদ্ধও। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে বনগাঁ লোকাল থেকে শুরু করে দলের রাজ্য দফতরের লাগোয়া এলাকায়। আবার ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতাদের বিরুদ্ধে পোস্টার পড়ে পোর্ট ট্রাস্টের অতিথিশালার সামনে। এর পরে রবিবার অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসঙ্ঘের বৈঠকে সিএএ কার্যকর করার দাবি ফের ওঠে। সেখানে শান্তনুও ছিলেন। সোমবার ‘চড়ুইভাতি’ করেন শান্তনু-সহ বিজেপির ‘বিক্ষুব্ধ’ নেতারা।
দলীয় সূত্রের খবর, ‘বিক্ষুব্ধ’দের যাবতীয় কর্মকাণ্ড, পোস্টার-যুদ্ধ এবং রাজ্য নেতৃত্বের প্রতিক্রিয়া বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কানেও পৌঁছেছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোট না মেটা পর্যন্ত তাঁরা এ রাজ্য নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোবে ১০ মার্চ। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, আরও দু’মাস ‘বিক্ষুব্ধ’দের পক্ষে নিজেদের প্রাসঙ্গিক রেখে যাওয়া কঠিন হবে। ফলে ধীরে ধীরে তাঁদের ‘ক্ষোভ’ জুড়িয়ে যাবে। বিপরীতে, ১০ মার্চ পর্যন্ত ক্ষোভের উত্তাপ বজায় রাখতে মরিয়া শান্তনু, জয়প্রকাশরা। বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, সে কারণেই তাঁরা অন্তত এক মাস দলের সব সাংগঠনিক জেলায় গিয়ে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বস্তুত, জেলা থেকে বুথ স্তর পর্যন্ত বাহিনী তৈরি করতে তৎপর হচ্ছেন। তার জন্য সব জেলায় ‘চা চক্র’ করবেন। সেখানেই নিজেদের পক্ষে লোক টানার চেষ্টা হবে।
রাজ্য বিজেপি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ এখনও এই নিয়ে মুখ খোলেননি। আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অবস্থান, দলে কারও ক্ষোভ থাকলে তা দলের ভিতরেই মেটানো সমীচীন। বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অনভিপ্রেত কিছু ঘটনা দল নিজস্ব গঠনতন্ত্র দিয়ে সমাধান করে ফেলবে।’’