Arjun Singh

BJP: শোচনীয় হালের জন্য ‘নব্য’দের দিকে সরাসরি আঙুল তুলছেন ‘আদি’রা, ডামাডোল প্রকট বিজেপিতে

পরিস্থিতি সামাল দিতে এ দিন কলকাতায় বৈঠক করেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। যেখানে বিজেপির বেহাল অবস্থা কার্যত বেআব্রু হয়ে পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি, কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২২ ০৬:৪৬
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

রাজ্য বিজেপিতে ডামাডোলে নতুন মাত্রা যোগ করল ব্যারাকপুরের সংসদ অর্জুন সিংহের দল বদল। এখন ‘আদি’ বিজেপির সঙ্গে ‘নব্য’ বিজেপির দ্বন্দ্ব আর আড়াল করা যাচ্ছে না। দলের এই শোচনীয় অবস্থার জন্য ‘নব্য’দের দিকে সরাসরি আঙুল তুলছেন ‘আদি’ নেতারা। যার আঁচে সোমবার কলকাতা থেকে দিল্লি দিনভর উত্তপ্ত থাকল গেরুয়া রাজনীতির অন্দর।

Advertisement

পরিস্থিতি সামাল দিতে এ দিন কলকাতায় বৈঠক করেন বিজেপির শীর্ষ নেতারা। যেখানে বিজেপির বেহাল অবস্থা কার্যত বেআব্রু হয়ে পড়ে। অস্বস্তি এতটাই ছিল যে, বৈঠক শুরুর আগে দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, “এমন কোনও বৈঠক হচ্ছে না।”

সূত্রের খবর, বৈঠকে অর্জুনের শূন্যস্থান ভরাট করার দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে সকলেই প্রায় অনীহা দেখান। শেষ পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। মুখে না স্বীকার করলেও এ দিনের বৈঠকে বিজেপি নেতাদের যা মনোভাব ছিল, তা অনেকটা এই রকম, বিজেপি আর কোনও ভাবে তৃণমূল-ত্যাগীদের বিশ্বাস করতে পারছে না। তাই সেই নেতাদের ঠেকানোর দায়িত্ব কোনও তৃণমূল-প্রাক্তনীর কাঁধে দিয়েই হাত ধুয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। এর আগে অর্জুনকে বোঝাতেও উদ্যোগী হয়েছিলেন এক সময়ে তৃণমূলে তাঁর সহকর্মী শুভেন্দু।

Advertisement

গোলমালের রেশ পৌঁছয় দিল্লিতেও। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক তথা প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ অনুপম হাজরা অর্জুনের দলত্যাগ নিয়ে বলেন, “যে পরিস্থিতিতে এক জন কাউন্সিলরের আসন জিততে মাথার ঘাম পায়ে পড়ছে, সেই পরিস্থিতিতে এক জন সাংসদের দল ছাড়া অবশ্যই দলের ক্ষতি। কোনও ক্ষতি হবে না বলে বিষয়টি এড়িয়ে না গিয়ে কেন দল ছাড়লেন, তা নিয়ে আত্মসমালোচনা প্রয়োজন।” অর্জুনের প্রভাব নস্যাৎ করে দিয়ে দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ পাল্টা বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তি দলে থাকায় দলের কোনও লাভ হয়নি। তা হলে ক্ষতির প্রশ্ন আসছে কী করে!’’

কলকাতায় বৈঠকে দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ উপস্থিত ছিলেন। রাজারহাটের একটি হোটেলে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিজেপির সহ-পর্যবেক্ষক অমিত মালবীয়। সকালেই দিল্লি চলে যাওয়ায় বৈঠকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন দিলীপ। বৈঠকে ডাকা হয় দলের ব্যারাকপুর সাংগঠনিক জেলার নেতাদের।

এর মধ্যেই দিলীপের দিল্লি যাত্রা অন্য তাৎপর্য বহন করেছে। সংসদীয় কমিটির বৈঠকে যোগ দেওয়ার কারণেই দিল্লি গিয়েছেন বলে জানা গেলেও তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে দাবি করা হয়েছে, দিল্লির কেন্দ্রীয় দফতরে তিন দিন তাঁর বৈঠক রয়েছে। সেই সময় সর্বভারতীয় সভাপতি জগৎ প্রকাশ নড্ডা ও সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষের সঙ্গে বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে তাঁর। সেই বৈঠকে সংগঠন পরিচালনা নিয়ে নিজের অসন্তোষের কথা জানাতে পারেন তিনি। কেন তৃণমূল-ত্যাগীদের সংগঠনে গুরুত্ব, কেন তাঁদেরকেই প্রার্থী করা, কেন তাঁদেরকেই সাংসদ-বিধায়ক করা হয়েছে, তা নিয়ে কার্যত জবাবদিহি চাইতে পারেন। তাঁর মতে, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশ্রয়েই পুরনো নেতাদের পিছনে ঠেলে দিয়ে দলবদলুদের মাথায় বসানো হয়েছে। প্রকাশ্যেও এ দিন তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেবল বক্তৃতা করে কিংবা ফেসবুক পোস্ট করে দল করা যায় না। ক’টা আন্দোলন ওই সব নেতারা করেছেন?’’ বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা, দিলীপের নিশানায় অর্জুনের পাশাপাশি ছিলেন অনুপমও।

বিজেপি সূত্রের খবর, সাংগঠনিক দায়িত্ব পেয়ে শুভেন্দু তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার আগেই ২৫ মে ব্যারাকপুরে কর্মীদের নিয়ে সভা করবেন। লক্ষ্য সাংগঠনিক জেলায় ফের ভাঙন ঠেকানো। তবে তা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে গেরুয়া শিবিরের অন্দরেই। এই বৈঠক নিয়ে কটাক্ষ করে তৃণমূল রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “গোরুর গাড়ির আবার হেডলাইট!”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement