ভুঁইফোঁড় অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণার ঘটনায় বরাবরই তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করে এসেছে বিজেপি। এমনকী, সারদা-কাণ্ডকে হাতিয়ার করে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক সিদ্ধার্থনাথ সিংহ ধর্মতলায় দাঁড়িয়ে রাজ্য থেকে তৃণমূলকে ‘ভাগিয়ে দেওয়া’র ডাক দিয়েছেন। অথচ সেই বিজেপি-রই কার্যত এখন সারদা-অস্ত্রে অরুচি! দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বৃহস্পতিবার জানান, শহিদ মিনার ময়দানে আগামী সোমবারের সমাবেশের সমাবেশের মূল স্লোগান— ‘গণতন্ত্র বাঁচাও, বাংলা বাঁচাও’। প্রশ্নের জবাবে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘সারদা বা রোজভ্যালি-কাণ্ড বিচারাধীন বিষয়। তাই ওই সব বিষয় নিয়ে সমাবেশে কথা বলার বিশেষ সুযোগ আমাদের নেই।’’
কিন্তু সারদা ও রোজভ্যালি-কাণ্ডের সিবিআই তদন্ত হচ্ছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে। অর্থাৎ, গোড়া থেকেই তা বিচারাধীন বিষয়। তার জন্য অমিত, সিদ্ধার্থনাথ বা দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি এবং অধুনা কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের ওই বিষয়ে তৃণমূলকে তীব্র আক্রমণ করতে অসুবিধা হয়নি। তা হলে এখন পরিস্থিতির কী পরিবর্তন হল? দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এখন বিজেপির কিছু করার দরকার নেই। যা করার সিবিআই-ই করছে। আমাদের সিবিআইয়ের উপর পুরো ভরসা আছে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, শহিদ মিনার ময়দানে বিজেপি-র সমাবেশের অনুমতিও এ বার পুলিশ এক কথাতেই দিয়ে দিয়েছে। যদিও কয়েক দিন আগে ব্রিগেডে মোহন ভাগবতের সভা করার জন্য আরএসএসকে এবং আসানসোলে সাংসদ মেলার অনুমতি পেতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কে আদালতে যেতে হয়েছিল।
বিজেপি-রই একাংশ এবং বিরোধী বাম ও কংগ্রেস অবশ্য এর মধ্যে তৃণমূলের সঙ্গে গেরুয়া শিবিরের ফের তালমিলের গন্ধ পাচ্ছে। সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী যে কারণে বলছেন, তৃণমূল-বিজেপি-র গড়াপেটার ফলেই সারদা-রোজভ্যালির সিবিআই তদন্তের গতি ফের ঢিমে হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে তৃণমূল কেন্দ্রের বাজেট বয়কট করায় ‘দিদিভাই-মোদীভাই বোঝাপড়া’র তত্ত্ব আরও বেশি প্রচার করছে বিরোধীরা। দিলীপবাবু-রাহুলবাবুরা অবশ্য ওই তত্ত্ব মোটেই মানছেন না। তাঁদের বক্তব্য, বিরোধীরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যাওয়াতেই বিজেপি-র নামে অপপ্রচার করছে।
সমঝোতার তত্ত্ব ভুল প্রমাণ করতে সক্রিয় তৃণমূলও। আজ, শুক্রবার থেকে সংসদের গাঁধীমূর্তির নীচে মোদী-বিরোধী ধর্নায় বসছেন তৃণমূলের সাংসদেরা। তার আগে এ দিন আবহাওয়া গরম করতে রাজ্যসভায় কেন্দ্রের বিরোধিতায় সোচ্চার হয়েছেন ডেরেক ও’ ব্রায়েন এবং সুখেন্দুশেখর রায়। রাজ্যসভায় ডেরেকের বক্তব্য, ‘‘সংসদে নোট বাতিল নিয়ে আমাদের বলার সময় প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখনই তাঁকে বলা হয়, আপনারা যত প্রতিহিংসা মেটাবেন, নোট বাতিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে আমরা তত সংকল্পবদ্ধ হব।’’ তা ছাড়া তৃণমূল সাংসদরাও চলতি অধিবেশনের বাকি কয়েক দিন সংসদের ভিতরে-বাইরে বাজেটের বিষয়েও সমালোচনা করবেন বলে দলীয় সূত্রের খবর।
অবশ্য বাংলায় অন্যতম দুই বিরোধী দলের মতে এ সব আসলে লোক দেখানো। লোকসভায় বাজেট পেশ করতে মোদী সরকারকে সুবিধা করে দেওয়ার পর মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে তৃণমূল শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, লোকসভা ভোটের এখনও আড়াই বছর বাকি। কিন্তু ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জমি হারাতে শুরু করেছেন। ফলে নীতিশ কুমারের মতো তাঁর পাশে দাঁড়ানোর প্রশ্নই নেই। আবার সিবিআই তদন্ত নিয়ে মাথাব্যথার কারণও রয়েছে মমতা শিবিরের। তাই এ ব্যাপারে নরম-গরম কৌশল নিয়েই এগোতে চাইছেন মমতা। তাই আগের মতো প্রধানমন্ত্রীকে ব্যক্তিগত আক্রমণ না করলেও জাতীয় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সংঘাতের রাস্তাও খোলা রাখা হচ্ছে।