বোর্ড গড়ছি, বিজেপির ঘোষণায় বিভ্রান্ত বিরোধীরা

শাসক তৃণমূলকে ঠেকাতে ঝান্ডা ছেড়ে একজোট হয়েছিল সব বিরোধী দল। বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের সঙ্গে ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ’ গড়তে এগিয়ে এসেছিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরাও। সব বিরোধী একজোট হয়ে এই ‘নির্দল’ মডেলেই সাফল্য এসেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুর পুরসভায়। কিন্তু ফল ঘোষণার পরে বিজেপি এ বার দাবি করল, নির্দলদের সমর্থন নিয়ে রামজীবনপুরে পুরবোর্ড গড়বে তারাই। বিজেপি নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড গঠন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা ও ঘাটাল শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

শাসক তৃণমূলকে ঠেকাতে ঝান্ডা ছেড়ে একজোট হয়েছিল সব বিরোধী দল। বাম, বিজেপি, কংগ্রেসের সঙ্গে ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চ’ গড়তে এগিয়ে এসেছিলেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরাও। সব বিরোধী একজোট হয়ে এই ‘নির্দল’ মডেলেই সাফল্য এসেছিল পশ্চিম মেদিনীপুরের রামজীবনপুর পুরসভায়। কিন্তু ফল ঘোষণার পরে বিজেপি এ বার দাবি করল, নির্দলদের সমর্থন নিয়ে রামজীবনপুরে পুরবোর্ড গড়বে তারাই। বিজেপি নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড গঠন এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা! এমন ঘোষণায় তৃণমূলকে রুখতে নিচু তলায় দলের রং ছেড়ে জোট বাঁধার প্রয়াস ধাক্কা খাবে বলেই বাম ও কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা।

Advertisement

রামজীবনপুরের ১১টি ওয়ার্ডের মধ্যে তৃণমূল এ বার পেয়েছে ৫টি। ‘দুর্নীতি বিরোধী মঞ্চে’র তরফে জিতেছেন চার জন নির্দল। আর দু’জন জয়ী হয়েছেন সরাসরি বিজেপি-র প্রতীকেই, যাঁরা গোড়া থেকেই ওই মঞ্চকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। সংখ্যার দিক থেকে দেখতে গেলে, এক জন নির্দলের সমর্থন পেলেই বোর্ড গড়ার জায়গা পৌঁছে যেত তৃণমূল। স্থানীয় সূত্রের দাবি, সে জন্যই ফলপ্রকাশের পরে এক নির্দল কাউন্সিলরকে নিজেদের দিকে টানতে তৃণমূল নেতৃত্ব উঠেপড়ে লেগেছিলেন। জয়ী দুই নির্দল প্রার্থী তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেই তথ্য গোপন থাকেনি। আর তার পরেই আসরে নামে বিজেপি। বৃহস্পতিবার ভোর হওয়ার আগেই চার নির্দল কাউন্সিলরকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বিজেপির জেলা নেতারা মেদিনীপুর শহরে নিয়ে চলে যান। কিন্তু সে খবরও তৃণমূল শিবিরে পৌঁছে যায় বলে খবর। তখন বিপদ বুঝে চার নির্দল কাউন্সিলরকে সোজা কলকাতায় নিয়ে যান বিজেপি নেতৃত্ব। এবং কলকাতায় বসেই বোর্ড গড়ার ঘোষণা!

কিন্তু ওই পুরসভা থেকে জয়ী চার নির্দল কাউন্সিলর রিঙ্কুরানি নিয়োগী, শিউলি সিংহ ভট্টাচার্য, জয়দেব ধাড়া এবং মানসী চৌধুরীকে পাশে বসিয়ে দলের রাজ্য দফতরে বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের বোর্ড গঠনের কথা ঘোষণার পরে স্থানীয় স্তরে সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁদের দাবি, বিজেপির সমর্থনে বোর্ড গড়া উচিত ছিল দুর্নীতি দমন মঞ্চের প্রার্থীদের। কারণ, কোনও দলের ঝান্ডা ছিল না বলেই স্থানীয় স্তরে সিপিএম এবং কংগ্রেস কর্মীরা ওই মঞ্চকে সমর্থন করেছিলেন। এর পরেও বিজেপি যদি বোর্ড গড়ে, তা হলে এমন সমঝোতার উপর থেকে বিশ্বাস টলে যাবে কর্মী-সমর্থকদের। সিপিএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক সাঁতরার কথায়, ‘‘বিজেপিকে ছাড়া বোর্ড হবে না ঠিকই, কিন্তু ওদের একক ভাবে এই বোর্ড গড়ার দাবি হাস্যকর।’’ কংগ্রেসের জেলা সহ-সভাপতি জগন্নাথ গোস্বামীর বক্তব্য, “হতে পারে বিজেপির প্রতীকে জয়ী কেউ পুরপ্রধান হলেন। কিন্তু তার মানে সেই বোর্ড বিজেপির হয়ে যায় না।”

Advertisement

রাহুলবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘ওই চার জনের মধ্যে তিন জনই আসলে আমাদের দলের লোক ছিলেন। তবে তাঁরা লড়েছিলেন উদীয়মান সূর্য প্রতীকে।’’ দলের লোক হলে তাঁরা বিজেপির প্রতীকে লড়েননি কেন? রাহুলবাবুর যুক্তি, ‘‘পরিস্থিতি অনুযায়ী তাঁরা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। এখন ওঁরা নিজেরাই আমাদের সমর্থন করতে চেয়ে যোগাযোগ করেছেন।’’ জয়ী নির্দল কাউন্সিলরেরাও এ দিন জানিয়েছেন, বিজেপির অভিজ্ঞ কাউন্সিলর গোবিন্দপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে চেয়ারম্যান হিসাবে মেনে নিতে তাঁদের আপত্তি নেই। শেষ পর্যন্ত রামজীবনপুরে সত্যিই বিজেপি-র নেতৃত্বাধীন বোর্ড হলে রাজ্যে তা হবে দ্বিতীয় পুরসভা। অতীতে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বিজেপি।

তবে রাহুলবাবুর সঙ্গে একমত নন স্থানীয় বেশ কয়েক জন বিজেপি কর্মী। তাঁদের মধ্যেও বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। রামজীবনপুরের এক বিজেপি কর্মীর মতে, “প্রথম থেকেই মহাজোট বলে প্রচার হয়েছে। এখন বিজেপি বোর্ড গড়ছে বললে এলাকার মানুষ মেনে নেবেন কেন?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement