গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এনআইএ আধিকারিকদের গাড়িতে হামলার ঘটনার সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে ইডির উপর আক্রমণের তুলনা টানল কেন্দ্রীয় বিজেপি। তাদের দাবি, বাংলায় বার বার কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের উপর আক্রমণের ঘটনায় এটাই প্রমাণিত যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় আইনশৃঙ্খলা বলে কিছু নেই। প্রায় একই অভিযোগ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকেরও। তাঁর দাবি, রাজ্যের পুলিশমন্ত্রীর উচিত পদত্যাগ করা।
শনিবার সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে। ২০২২ সালের একটি বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্তদের আটক করতে গিয়ে স্থানীয়দের হামলার মুখে পড়তে হয় জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকদের। তাঁদের গাড়ির কাচ ভাঙা হয়। সেখান থেকে কোনও ক্রমে বেরিয়ে যায় এনআইএ। গ্রেফতার করা হয় তৃণমূলের দু’জনকে। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভূপতিনগর থানায় মামলাও দায়ের করে এনআইএ। এ নিয়ে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের শাসকদলের তীব্র নিন্দা করে।
তার পরে নয়াদিল্লিতে সাংবাদিক বৈঠক করে মমতার সরকারকে একহাত নিয়েছে কেন্দ্রীয় বিজেপি। ভূপতিনগরে এনআইএ-র উপর আক্রমণকে সন্দেশখালি ২.০ বলে মন্তব্য করেন কেন্দ্রীয় বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র শেহজাদ পুনাওয়ালা। তিনি শাহজাহান শেখের বাড়িতে গিয়ে ইডির আক্রান্ত হওয়ার ঘটনার সঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগরে এনআইএ-র উপর হামলার তুলনা টানেন। পুনাওয়ালা বলেন, ‘‘এটা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের স্পনসর করা হামলা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এই হামলাকে জাস্টিফাই করে ক্লিনচিট দিচ্ছেন হামলাকারীদের।’’ কেন্দ্রীয় বিজেপির তরফে আরও বলা হয়, ‘‘বাংলা থেকে পঞ্জাব— দুই রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে। দুই রাজ্যের সাধারণ মানুষ ত্রস্ত। প্রতি দিন নতুন করে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা একটু একটু করে ভেঙে পড়ছে।’’
বস্তুত, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই ঘটনা নিয়ে বলেছেন, ‘‘ওখানে মহিলারা হামলা করেননি। আসলে হামলা করেছে এনআইএ।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মধ্যরাতে গিয়ে যদি মহিলাদের বাড়িতে অত্যাচার করে, তবে মহিলারা কি হাতে শাঁখা, পলা পরে বসে থাকবে? মাথায় ওড়না দিয়ে বসে থাকবে? তারা নিজেদের ইজ্জত বাঁচাবে না?’’ মমতা এ-ও অভিযোগ করেন, ভূপতিনগরে মধ্যরাতে এনআইএ-র অভিযান আসলে করানো হয়েছে বিজেপিকে ভোটে সাহায্য করার জন্য।
ওই ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিশীথ বলেন, ‘‘বাংলায় আইনশৃঙ্খলা ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। একের পর এক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপর যে ভাবে পরের পর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। বাংলায় কেন এ রকম ঘটনা বার বার ঘটছে, সেই প্রশ্ন উঠছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘যে ভাবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার উপর হামলার ঘটনা ঘটছে, এ নিয়ে আমরাও অপেক্ষা করব।’’
এর মধ্যে দলীয় কর্মীদের গ্রেফতারির প্রতিবাদে ভূপতিনগরে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছে স্থানীয় তৃণমূল।