প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ সৈফুদ্দিনের ৬৮তম জন্মদিনে ‘দেশ বাঁচাতে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের ঐক্য চাই’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন। —নিজস্ব চিত্র।
সাম্প্রদায়িকতার বিপদকে রুখতে কংগ্রেস-সহ ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যের কথা তিনি বলেছিলেন সেই নয়ের দশকে। তখন আমল পাননি। সেই সৈফুদ্দিন চৌধুরীরই জন্মদিন উপলক্ষে স্মরণ-মঞ্চে দাঁড়িয়ে কংগ্রেস ও বাম নেতারা মেনে নিলেন, তাঁরা উপযুক্ত বিকল্প দিতে পারেননি বলে এ রাজ্যের মানুষের বড় অংশের সমর্থন বিজেপির দিকে গিয়েছে। দেরি হলেও বিজেপির বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে গণ-আন্দোলনের বৃহত্তর মঞ্চ গড়ে তুলে এখনও পরিস্থিতি বদলানো সম্ভব বলেও তাঁরা মনে করছেন।
প্রয়াত প্রাক্তন সাংসদ সৈফুদ্দিনের ৬৮তম জন্মদিনে ‘দেশ বাঁচাতে ধর্মনিরপেক্ষ মানুষের ঐক্য চাই’ শীর্ষক আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল পিডিএস। ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট হলে বৃহস্পতিবার ওই সভায় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, ‘‘অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করতে পারিনি। কিন্তু আবার চেষ্টা করছি। ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক ও দেশপ্রেমিক মানুষকে একসঙ্গে নিয়ে এই লড়াই লড়তে হবে।’’ বামেদের সঙ্গে কংগ্রেসের সমঝোতা লোকসভা ভোটের আগে দানা বেঁধে না ওঠার প্রসঙ্গের পাশাপাশিই বাংলায় বিজেপিকে জমি তৈরি করে দেওয়ার জন্য তৃণমূলের ভূমিকার কথাও উঠেছে এ দিন। সোমেনবাবুর বক্তব্য, ‘‘খাল কেটে কুমির আনার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন উন্মত্তের মতো বাঁচাও, বাঁচাও বলে চিৎকার করছেন! আমরা খাল কাটিনি, কুমির আনিনি। আমাদের ক্ষমতা সীমিত হলেও লক্ষ্য নির্দিষ্ট।’’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী ওই মঞ্চেই বলেন, শুধু সাম্প্রদায়িকতার কথা বলে গরিব, সাধারণ মানুষকে সংহত করা যাবে না। রুটি-রুজির লড়াইয়ের সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতার লড়াইকে মেলাতে হবে। সুজনবাবুর কথায়, ‘‘শ্রম আইন দুর্বল করে দেওয়া হচ্ছে। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও হাত পড়েছে। একটা কেন্দ্রীয় সরকার নতুন চাকরি বা শিল্পের কথা বলছে না। কিন্তু ফ্রিজ খুলে কী মাংস আছে, তার গন্ধ পেয়ে যাচ্ছে! বেঁচে থাকার লড়াইয়ের সঙ্গেই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তার জন্য বৃহত্তর ঐক্য চাই।’’
পিডিএস নেতা সমীর পূততুণ্ডের মতে, বাংলায় বিজেপির ক্ষমতায় আসা ঠেকানো সম্ভব। তাঁর বক্তব্য, ‘‘তার জন্য যা করার, করতে হবে। এবং সেটা কংগ্রেসই পারবে। সিপিএমের সাংগঠনিক শক্তি বেশি কি না, তাদের সমর্থন বেশি কি না, সেই অঙ্ক দিয়ে হিসেব করলে চলবে না।’’ আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্য, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায় এবং সিপিআইয়ের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বাংলায় তৃণমূল গণতন্ত্র ধ্বংস না করলে বিজেপির এমন উত্থান হতো না। ইউসিপিআইয়ের রাজ্য সভাপতি বাসুদেব গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য তৃণমূলের অ-সাম্প্রদায়িক অংশকে সঙ্গে নিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতা রক্ষার লড়াইয়ের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সোমেনবাবু, সুজনবাবুরা তৃণমূলকে বিশ্বাস করতে নারাজ।