ফাইল চিত্র।
দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণের কাজে তাঁদের চিহ্নিত জায়গায় সাবওয়ে না করলে এবং তা নিয়ে আন্দোলনে বাদ সাধলে পুলিশকে ‘আছাড় মারা’র হুঙ্কার শোনা গিয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী তথা সিঙ্গুরের বিধায়ক বেচারাম মান্নার মুখে। এর পাল্টা হিসেবে বিজেপি নেতৃত্ব পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে শাসক দলকে রোখার বার্তা দিলেন। গোটা বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে অস্বস্তিতে রাজ্যের শাসকদল।
ডানকুনি থেকে পানাগড় পর্যন্ত দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে সম্প্রসারণের কাজ মাস কয়েক আগে শুরু হয়েছে। কাজের শুরু থেকেই বেচারাম বিভিন্ন সময়ে নানা দাবিদাওয়া তোলেন। ওই সড়কের ১১টি জায়গায় আন্ডারপাসের দাবিতে রবিবার চণ্ডীতলায় সভা করেন বেচারাম। তার পরে একটি গ্রামে গিয়ে অনুগামীদের ভিড়ে বেচারাম নিদান দেন, তাঁদের চিহ্নিত জায়গায় সাবওয়ে না করলে সেই জায়গায় রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ যেন গ্রামবাসীরা বন্ধ করে দেন। গ্রামবাসীদের বাধা দিলে তিনি পুলিশকে আছাড় মারবেন বলেও হুঙ্কার দেন। মন্ত্রীর এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহল সরগরম। পরে অবশ্য মন্ত্রী ওই হুঙ্কারের কথা অস্বীকার করেন। সোমবার অবশ্য বেচারাম বলেন, ‘‘আমি ওই কথা বলতে চাইনি। মুখ ফসকে বেরিয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের কোনও কাজ নেই। ওই কথা নিয়ে আমার নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়াচ্ছে।’’
বিজেপির শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মোহন আদক বলেন, ‘‘উন্নয়নের কাজ রাজ্যই করুক বা কেন্দ্র, আমরা কোনও বাধা সহ্য করব না। ডানকুনিতে যানজটে জেরবার মানুষ। সমস্যা সমাধানে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সড়ক সম্প্রসারণ করছেন। রাজ্যের মন্ত্রী সেই কাজ বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন।’’ এরপরেই তাঁর সংযোজন, ‘‘দায়িত্ব নিয়ে বলছি, পুলিশ যদি জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাজের সমস্যা ঠেকাতে কোনও ভাবে তৃণমূলের বাধার মুখে পড়ে, আমরা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তৈরি করে ওদের হটিয়ে দেব। ওরা (তৃণমূল) আসলে কৌশলে বাধা সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত লাভের জন্য রফার মতলবে রয়েছে। এইসব অপচেষ্টা আমরা রুখে দেব।’’
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দাবি, স্থানীয় মানুষজনের সমস্যা এবং দাবি নিয়ে আলোচনা হতেই পারে। তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী এই প্রকল্পে অনেক সাবওয়ে যুক্ত করা হয়েছে। ডানকুনি আর সিঙ্গুরের মধ্যে বেশ কয়েকটি উড়ালপুল ছাড়াও এলাকাবাসীর যাতায়াতের সুবিধায় এবং যানজট ঠেকাতে নতুন বেশ কিছু সাবওয়ে তৈরি করা হচ্ছে। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের প্রকল্প অধিকর্তা স্বপন মল্লিক বলেন, ‘‘কাজ নিয়ে আলোচনার দরজা খোলা। বেচারাম মান্না আন্ডারপাসের যে তালিকা আমাদের পাঠিয়েছিলেন, তাঁর বেশিরভাগই অনুমোদন হয়ে গিয়েছে। জাতীয় স্বার্থে এই কাজে সকলের সহযোগিতা জরুরি।’’
তৃণমূলের শ্রীরামপুর-হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তথা চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁইন রবিবার মন্ত্রীর কর্মসূচিতে ছিলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি যে মঞ্চে ছিলাম, সেখানে কাজ বন্ধ করা নিয়ে কোনও বক্তব্য শুনিনি। উনি (বেচারাম) সম্ভবত মঞ্চ থেকে নেমে অন্যত্র কিছু বলে থাকবেন। তবে কাজ বন্ধের কোনও প্রশ্নই নেই। গ্রামবাসীদের যদি কোনও নায্য দাবি থাকে, সেই নিয়ে আলোচনা চলুক জাতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। একই সঙ্গে কাজও চলুক।’’