ফাইল চিত্র।
ভোটমুখী বাংলার রাজনৈতিক তরজা সংসদের অন্দরেও। সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্তৃতার পক্ষে জবাবি বক্তব্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী যেমন বাংলায় গণতন্ত্রের ‘অবক্ষয়’ নিয়ে সরব হলেন, তেমনই দুর্নীতির অভিযোগে সরাসরি ‘পিসি-ভাইপো জুটিকে’ নিশানা করলেন বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়। পরে সাংবাদিক বৈঠকে পাল্টা আক্রমণের পথে হাঁটল তৃণমূলও। তাদের দাবি, নিজেদের ব্যর্থতা থেকে নজর ঘোরাতেই মিথ্যে বলছে কেন্দ্র।
শুক্রবার রাজ্যসভায় তৃণমূল নেতা ডেরেক ও ব্রায়েনের বক্তৃতার প্রসঙ্গ টেনে সোমবার নরেন্দ্র মোদী বলেন, ‘‘গণতন্ত্র নিয়ে অনেক উপদেশ দেওয়া হয়েছে। ডেরেক ও ব্রায়েনের কথা শুনছিলাম। খুবই বড় বড় শব্দ ব্যবহার করছিলেন। ‘বাক্-স্বাধীনতা’, ‘ভয় দেখানো’ ইত্যাদি। কিন্তু উনি কি বাংলার কথা বলছেন? নাকি দেশের কথা? বাংলায় চব্বিশ ঘণ্টা যা দেখছেন, সেটিই ভুল করে এখানে বলেছেন!’’ এর পরেই সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘‘প্রধানমন্ত্রী শ্লেষের সঙ্গে ডেরেকের কথাগুলি উল্লেখ করেছেন। স্পষ্ট জানাতে চাই, এগুলি বাংলা নয়, মোদীর সরকার সম্পর্কেই বলা। মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ, ভয় দেখানোর মতো ঘটনা ঘটেছে জম্মু ও কাশ্মীরে, নাগরিকত্ব আইন আনার ক্ষেত্রে, এমনকি কৃষক আন্দোলন দমনের চেষ্টার সময়েও।’’
প্রধানমন্ত্রীর আক্রমণের সূত্র ধরেই এ দিন দুর্নীতির অভিযোগে তৃণমূল সরকারকে বিঁধেছেন লকেট। রবিবার হলদিয়া সফরে প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধির সুবিধা বাংলার চাষিদের না-পাওয়ার বিষয়ে সরব হওয়ার পরে এ দিন ফের রাজ্যসভায় সেই প্রসঙ্গ তুলেছেন মোদী। বলেছেন, ‘‘ওই প্রকল্পে এখনও ১০ কোটি পরিবার লাভবান হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতির খপ্পরে পড়ে একে সরিয়ে না-রাখলে, এই সংখ্যা আরও বাড়ত।’ সেই সূত্রে লোকসভায় লকেটের দাবি, কেন্দ্রের প্রকল্প পশ্চিমবঙ্গে গেলেই নাম পাল্টে রাজ্যের হয়ে যায়। অন্ত্যোদয় যোজনা থেকে খাদ্যসাথী। স্বচ্ছ ভারত হয়ে যায় নির্মল বাংলা। তাঁর অভিযোগ, ‘চুরির কারণেই’ কেন্দ্রের পাঠানো উন্নত মানের চাল রাজ্যবাসীর পাতে আসে খারাপ চাল হয়ে। লকেটের বক্তব্য, “চুরি বিদ্যা ‘পিসি-ভাইপো’ ভালই রপ্ত করেছে। ডিলিট থেকে শুরু করে ‘ভাইপোর’ এমবিএ ডিগ্রি তার প্রমাণ।’’ তাঁর দাবি, সবাই জানেন যে, পশ্চিমবঙ্গে তোলবাজ, গরু চোর, কয়লা চোর আসলে কে? নিজেই উত্তর দিয়ে বলেন, ‘ভাইপো’। লকেটের বক্তব্যে তখন হাসির রোল ট্রেজারি বেঞ্চে। মুচকি হাসতে দেখা যায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকেও। লকেটের দাবি, “কয়লা কেলেঙ্কারিতে যাকে সিবিআই ধরছে, তার টাকা ‘ভাইপোর’ পরিবারে গিয়েছে।’’ তাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তা রাখা রয়েছে বলেও তাঁর দাবি। তবে এই ‘পিসি-ভাইপোর’ নাম উল্লেখ
করেননি তিনি।
এ প্রসঙ্গে লোকসভায় তৃণমূলের নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিজেপির দেউলিয়া রাজনীতির ছবিই এতে স্পষ্ট হল। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পরে লোকসভায় আজ রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে ধন্যবাদ জ্ঞাপক আলোচনা শুরু হয়েছিল। কিন্তু ওঁর (লকেটের) বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, যেন পশ্চিমবঙ্গে ‘স্ট্রিট কর্নার মিটিং’ চলছে।’’ এ বিষয়ে আগামীকাল বলবেন সৌগতও। প্রধানমন্ত্রীর কিসান নিধি নিয়ে দাবি প্রসঙ্গে এ দিন যাঁর জবাব, ‘‘রাজ্যের কৃষকবন্ধু প্রকল্পে চাষিরা যে ভাবে লাভবান হয়েছেন, তার ধারেকাছে আসে না প্রধানমন্ত্রীর যোজনা।’’
বাদ যায়নি বঙ্গের মনীষী বন্দনাও। নেতাজিকে আজাদ হিন্দ সরকারের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আমরা ওঁর ১২৫তম জন্মজয়ন্তী পালন করছি। দুর্ভাগ্য যে, আমরা নেতাজির বিচার ও আদর্শকে ভুলে গিয়েছি।’’ সৌগতর কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নেতাজি নিয়ে যত কম বলেন, তত ভাল। সম্প্রতি কলকাতায় তাঁর জন্মদিনের সরকারি অনুষ্ঠানে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে নেতাজিকেই অপমান করা হয়েছে।’’ লকেটের অভিযোগ, বাংলায় জয় শ্রীরাম বললে গ্রেফতার করা হচ্ছে। যার জবাব মানুষ নির্বাচনে দেবেন।
লকেটের কটাক্ষ, “পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যবাসীর ঘরে ঘরে চিঠি পাঠিয়ে বিনামূল্যে প্রতিষেধক দেওয়ার কথা বলছে। যেন কালীঘাটে ওনার ঘরে তা তৈরি করে পাইপে দিয়ে পাঠানো হচ্ছে প্রতি বাড়িতে।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়া অথবা কালো টাকা দেশে ফেরানো নিয়ে যে কথা মোদী দিয়েছিলেন, সে সম্পর্কে আজ বক্তৃতায় নীরব থাকাই শ্রেয় মনে করেছেন তিনি। গতকাল হলদিয়ায় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, বাম-কংগ্রেস তৃণমূলের সঙ্গে ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ করছে। আজ সৌগতর দাবি, ‘‘তৃণমূলের সেই ইচ্ছা নেই, টাকাও নেই। বিজেপি তো আমার কেন্দ্রেই এর আগে টাকা দিয়ে বামেদের ভোট কিনেছে। এ তো দেখা যাচ্ছে চোরের মায়ের বড় গলা!’’