(বাঁ দিকে) মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুভেন্দু অধিকারী। —নিজস্ব চিত্র।
রাজ্য বিধানসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলছে। শীতকালীন অধিবেশন শুরু হয়েছে সংসদেও। কাকতালীয় হলেও বাস্তব যে, বুধবার যে প্রসঙ্গে বিধানসভায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল বিজেপি, সেই একই প্রসঙ্গে সংসদের উচ্চকক্ষ তথা রাজ্যসভায় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে বিঁধল তৃণমূল! কেন্দ্রের সমালোচনার পাশাপাশি রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার কী করেছে তার খতিয়ান তুলে ধরেন রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সামিরুল ইসলাম। বিষয়: চা বাগান এবং চা শ্রমিকদের সমস্যা।
বুধবার বিধানসভায় চা বাগান নিয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল বিজেপি। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় তা নিয়ে আলোচনার সময় বরাদ্দ না করায় কক্ষত্যাগ করে বিজেপি পরিষদীয় দল। বিজেপির অভিযোগ, উত্তরবঙ্গে চা বাগান বন্ধ করে পালিয়ে যাচ্ছেন মালিকেরা! ফলে কাজ হারাচ্ছেন উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ। এ নিয়ে বুধবার বিধানসভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনে বিজেপি। যদিও তা নিয়ে আলোচনার জন্য কোনও সময় বরাদ্দ করা হয়নি।
বিজেপির মুখ্যসচেতক মনোজ টিগ্গার দাবি, উত্তরবঙ্গের মোট ১১টি চা বাগান বন্ধ রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার চা বাগান খুলতে সচেষ্ট হলেও রাজ্য সরকার ‘উদাসীন’। তাই চা বাগানের উন্নতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছা থাকলেও কিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁর আরও দাবি, নির্মলা সীতারমন বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালীন উত্তরবঙ্গের ডানকানের চা বাগানগুলি কেন্দ্রীয় সরকার অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নিলেও রাজ্য সরকারের ‘উস্কানি’তে সংস্থাটি আদালতে চলে যায়। ফলে অধিগ্রহণ থমকে যায়।
পক্ষান্তরে, রাজ্যসভায় তৃণমূলের সামিরুল বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে প্রায় ৪০০ চা বাগান রয়েছে। তিন লক্ষের বেশি শ্রমিক সেখানে কাজ করেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ১৯৫১ সালের চা-আইন বলবৎ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সে কারণেই চা শ্রমিকেরা তাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি পাচ্ছেন না।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্র যখন চা বাগানের শ্রমিক, চা বাগান থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে, তখন রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ‘চা সুন্দরী’ প্রকল্পে চা শ্রমিক মহল্লায় চার হাজার বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার মধ্যে ১২০০ বাড়ি তৈরির কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।’’
গত লোকসভা ভোটে গোটা উত্তরবঙ্গে বিজেপির দাপট দেখা গিয়েছিল। মালদহ দক্ষিণ (কংগ্রেস) বাদ দিয়ে সব আসনে জিতেছিল গেরুয়া শিবির। বিধানসভা ভোটেও চা বাগান অধ্যুষিত এলাকায় ভাল ফল করেছিল বিজেপি। আরও একটি লোকসভা ভোট যখন দোরগোড়ায়, তখন তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষই তাদের মতো করে চা বাগান, চা শ্রমিকদের বিষয়কে সামনে আনতে চাইছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। রাজনৈতিক মহলের অনেকের বক্তব্য, চা বলয়ের মন পেতেই আলিপুরদুয়ারের সাংসদ জন বার্লাকে কেন্দ্রে মন্ত্রী করেছে বিজেপি। আবার বিজেপিকে বিচ্ছিন্ন করতে ইতিমধ্যেই তৃণমূল একাধিক সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ করেছে। চা বলয়ের আদিবাসী নেতা প্রকাশ চিক বরাইককে রাজ্যসভায় পাঠানো, তাঁকে জেলা সভাপতি করা সে সবেরই অংশ বলে মত তাঁদের। আবার সামিরুল সারা বছর পরিযায়ী শ্রমিক-সহ নানা ধরনের শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা, নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করেন বলে তাঁকেও রাজ্যসভায় পাঠিয়েছে বাংলার শাসকদল। সেই চা বলয়ের দাবিদাওয়া নিয়েই বিধানসভা ও রাজ্যসভায় একে অন্যের বিরুদ্ধে সরব হল বিজেপি-তৃণমূল।