ফাইল চিত্র।
প্রকল্পের কাজ খতিয়ে দেখতে আসছে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। সেই জন্য আবাস যোজনার ফলকে ‘বাংলা আবাস যোজনা’ মুছে লিখতে হবে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’। শনি ও রবিবার, মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিটি পঞ্চায়েত এলাকায় সে কাজ সেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বীরভূম জেলা প্রশাসনের পক্ষে। সরাসরি মন্তব্য এড়ালেও শুক্রবার ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে জেলার ১৬৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও সমস্ত ব্লক প্রশাসনকে এমন নির্দেশ যে দেওয়া হয়েছে, তা মেনেছেন জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তা।
‘বাংলা আবাস যোজনা’র নাম থেকে ‘বাংলা’ কেটে ‘প্রধানমন্ত্রী’ না-বসানো হলে এই প্রকল্পে আর এক টাকাও দেওয়া হবে না রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার ‘শহিদ দিবসের’ সমাবেশ থেকে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যদিও বলে দিয়েছেন, বাংলার প্রকল্প বাংলার নামে না হলে কেন্দ্রের টাকা লাগবে না।
কিন্তু, বীরভূম প্রশাসন কেন্দ্রীয় দলের পরিদর্শনের আগে কোনও রকম ‘ঝুঁকি’ নিতে নারাজ। প্রশাসন সূত্রে খবর, যেহেতু ২০২১-’২২ অর্থবর্ষের প্রাপ্ত এক লক্ষ বাড়ির ফলকে বাংলা ও প্রধানমন্ত্রী, দুইয়েরই উল্লেখ ছিল, সেই জন্য ‘সাপও মরে, লাঠিও না ভাঙে’ কায়দায় উতরে যাওয়া যাবে বলেই মনে করছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু, কেন্দ্রীয় দল বীরভূমের যে কোনও প্রান্তে গিয়ে কাজ দেখতে পারে। সেখানে কোনও ফলকে শুধু বাংলা কিংবা বাংলার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী দেখে কেন্দ্রীয় দল প্রশ্ন তুললে জবাবদিহি করতে হবে জেলা প্রশাসনকে। তার জন্যই ফলক থেকে বাংলা মোছার এই নির্দেশ বলেইজানা গিয়েছে।
শুধু তাই নয়, সূত্রের খবর, রাজ্য প্রশাসন থেকে সব জেলা প্রশাসনের কাছে নির্দেশ গিয়েছে, কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করার। তারা যা যা জানতে চাইবে, ঠিকঠাক তার উত্তর দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
বীরভূম প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথমে বাড়িগুলিতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ই লেখা হচ্ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী বাদ দিয়ে লেখা হচ্ছিল ‘বাংলা আবাস যোজনা’। পরের দিকে বেশ কিছু বাড়িতে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’ এবং ‘বাংলা আবাস যোজনা’, দুটোই লেখা হয়েছে। কিছু উপভোক্তা রয়েছেন যাঁদের বাড়িতে কোনও কিছুই লেখা হয়নি। যে-সব বাড়িতে এখনও বাংলা রয়ে গিয়েছে, সেগুলিই দু’দিনের মধ্যে মোছার নির্দেশ হয়েছে।
বিডিওদের একাংশ আড়ালে বলছেন, ‘‘গত পাঁচ বছরে গোটা জেলায় অন্তত সাড়ে তিন লক্ষ বাড়ি হয়েছে। প্রতিটি ব্লক ধরলে সংখ্যা ২০-৩০ হাজার। মাত্র দু’দিনে এত সংখ্যক বাড়ির দেওয়ালের ফলক খতিয়ে দেখা এবং ‘ভুল’ সংশোধন খুবই চাপের।’’ আবাস যোজনার মতোই ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র নাম বদলে ‘বাংলা সড়ক যোজনা’ করা হয়েছে। রাস্তাগুলি জেলা পরিষদ করায়, তার ফলক থেকে বাংলা মোছার দায়িত্ব তাদেরই। কয়েক ঘণ্টায় সে কাজ কতটা হবে, সংশয়ে পঞ্চায়েতগুলিও।