ইচ্ছেমতো যখন-তখন হাজিরা খাতায় সই করে সরকারি কলেজে উপস্থিতি জানান দেওয়ার দিন শেষ হতে চলেছে। কোন শিক্ষক-শিক্ষিকা বা কোন শিক্ষাকর্মী ঠিক কখন কলেজে ঢুকলেন এবং কখন বেরিয়ে গেলেন, সেই সময় নথিভুক্ত করতে এ বার ‘বায়োমেট্রিক’ পদ্ধতি চালু করার পথে হাঁটছে রাজ্য সরকার। সরকারি কলেজ দিয়ে সূচনা। ক্রমে এই ব্যবস্থা চালু হবে সব কলেজেই।
সরকারি কলেজ হোক বা সরকারি সাহায্যপুষ্ট কলেজ— হাজিরা খাতা আছে সর্বত্রই। কিন্তু কলেজে পৌঁছেই তাতে সময় উল্লেখ করে সই করা এবং বেরোনোর সময় লিখে ফের সই করার বালাই নেই বললেই চলে। অভিযোগ, অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী ইচ্ছেমতো আসেন-যান এবং দিনান্তে একটা সই মেরে দেন হাজিরা খাতায়। উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, সরকার এ বার এই অনিয়মটাই বন্ধ করতে চাইছে। কলেজের সার্বিক শৃঙ্খলার জন্য এটা জরুরি বলে মনে করা হচ্ছে।
কলেজে কী ভাবে কাজ করবে এই বায়োমেট্রিক হাজিরা ব্যবস্থা?
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, আপাতত সব সরকারি কলেজেই অধ্যক্ষের ঘরের বাইরে এবং স্টাফরুমের বাইরে বায়োমেট্রিক মেশিন বসানো থাকবে। কলেজে পৌঁছেই এবং বেরোনোর মুখে সব শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীকে ওই যন্ত্রে বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল ঠেকাতে হবে। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁর হাজিরা বা প্রস্থানের সময় নথিভুক্ত হয়ে যাবে। কলেজ মাসে মাসে সেই তথ্য উচ্চশিক্ষা দফতরে পাঠিয়ে দেবে। পরে কলেজ থেকে স্যাটেলাইট মারফত সরাসরি হাজিরা সংক্রান্ত তথ্য বিকাশ ভবনে পৌঁছে দেওয়ার বন্দোবস্তও করা হতে পারে। এ ভাবেই সম্পূর্ণ হবে নজরদারির বৃত্ত।
যাবতীয় পরিকল্পনা দ্রুত রূপায়ণ করতে উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। উচ্চশিক্ষা দফতরের খবর, শীঘ্রই বিজ্ঞপ্তি জারি করে এই কাজ শুরু হবে। প্রথমে রাজ্যের ৬৫টি সরকারি কলেজে এই ব্যবস্থা চালু হওয়ার কথা। সেই সঙ্গে বিকাশ ভবনের আমলাদের ঘরের বাইরেও ওই যন্ত্র বসানো হবে। উচ্চশিক্ষা দফতরের সচিব থেকে শুরু করে অন্য সব আধিকারিককেও এই প্রযুক্তি-নির্ভর নজরদারির আওতায় আনা হবে।
সরকারের তরফে সরকারি কলেজে এত দিনে হাজিরায় যান্ত্রিক নজরদারি চালু করার ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে মেদিনীপুর মহিলা কলেজ এবং মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর কলেজ বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে শিক্ষকদের হাজিরার খতিয়ান রাখার বন্দোবস্ত করেছে নিজেদের উদ্যোগেই। সরকার এখন এই ব্যবস্থা করছে কেন?
‘‘এর সঙ্গে কলেজের সার্বিক শৃঙ্খলার প্রশ্ন জড়িত। সর্বস্তরের শিক্ষকদেরই নির্দিষ্ট দায়বদ্ধতা আছে। কিন্তু সকলে যথাযথ ভাবে দায়িত্ব পালন করেন না বলে অভিযোগ। সেই জন্যই এই বন্দোবস্ত,’’ বললেন শিক্ষা দফতরের এক কর্তা। কিছু দিন আগে শাসক দলের শিক্ষক সংগঠনের একটি অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, স্কুলশিক্ষকেরা যেন স্কুল চলাকালীন সংগঠনের কোনও কাজ না-করেন। যথাসময়ে হাজিরা নিশ্চিত করার কথাও বলেছেন তিনি। মন্ত্রী বহু বার ঘনিষ্ঠ মহলে অভিমত প্রকাশ করেছেন, সব কলেজে শিক্ষকদের উপস্থিতি সুনিশ্চিত করাটাও জরুরি।
ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ হাজিরা না-থাকলে কলেজে পড়ুয়াদের পরীক্ষায় বসতে না-দেওয়ার নিয়ম কঠোর ভাবে বলবৎ হচ্ছে। কিন্তু তাতেও সব সময় ছাত্রছাত্রীদের কলেজমুখী করা যাচ্ছে না। এর জন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অনিয়মিত উপস্থিতিই দায়ী বলে শিক্ষা শিবিরের একাংশের অভিযোগ। শিক্ষা দফতরের কর্তাদের আশা, নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস হবেই— এটা নিশ্চিত করা গেলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার বাড়বে। শিক্ষকেরা নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে পৌঁছলেন কি না বা পুরো সময় থাকলেন কি না, তা জরিপ করতে বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা কার্যকর হবে বলে মনে করছেন উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা।