বক্তা: ফব-র দফতরে বিমান বসু। রবিবার।—নিজস্ব চিত্র।
যাঁর স্মরণে বক্তৃতার আয়োজন, তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে দলকেই সংসার করে নিয়েছিলেন। যিনি স্মারক বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রিত, তিনি নিজেও দলীয় দফতরের আটপৌরে ঘরে ধুতি-পাঞ্জাবি নিজের হাতে কেচে পরেন। রাজনীতির টানে ঘর ছেড়েছিলেন যখন, দু’জনেই ভাবেননি দল এক দিন ক্ষমতায় আসবে। ক্ষমতার সেই দিন পেরিয়ে বিরোধী ভূমিকায় ফিরে গিয়ে অগ্রজের স্মরণে অনুজ তাই বাম কর্মী-সমর্থকদের মনে করিয়ে দিলেন, ক্ষমতায় ফেরার ভাবনা মাথায় রেখে আন্দোলন করলে এগোনো যাবে না!
আরও পড়ুন: সম্পাদক কে, ভাঙা হাটেও লড়াই বর্ধমানে
যত দিন জীবিত ছিলেন, অশোক ঘোষের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাতে ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য দফতরে আসতেন বিমান বসু। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান রবিবার অশোকবাবুর ৯৫তম জন্মদিনেও এসেছিলেন ওই ঠিকানায়। তবে এ বার ‘অশোক ঘোষ স্টাডি সেন্টারে’র আমন্ত্রণে স্মারক বক্তৃতা করতে। দেশ ও রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতিতে বামপন্থী সব দল ও গণসংগঠনকে স্বাধীন কর্মসূচির পাশাপাশি যৌথ আন্দোলনে যেতে হবে— অশোকবাবুর এই পরামর্শের কথা বলতে গিয়েই বিমানবাবু কড়া হুঁশিয়ারি দিলেন বাম নেতা-কর্মীদের একাংশের মানসিকতাকে। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘নবান্ন অভিযান সফল ভাবেই হয়েছে। কিন্তু খোলাখুলি বলছি, তার পর থেকে নানা জায়গায় গিয়ে প্রশ্ন শুনছি আমরা আবার কবে ফিরে আসব? এই ভাবনা থেকে যদি আন্দোলন হয়, কোনও দিন কিছু হবে না! আন্দোলন হবে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য, মানুষের ন্যূনতম অধিকার রক্ষার জন্য। মনে যদি বাসনা থাকে কবে আবার ক্ষমতায় ফিরব, তা হলে বেশি এগোনো যাবে না।’’
বিমানবাবু ৭৮-এ পা দিয়েছেন শনিবারই। প্রবীণ নেতা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ১৯৬৭ সালে প্রথম যুক্তফ্রন্ট বা ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার হওয়ার কথা আগাম কেউ ভাবতে পারেননি। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘ভাবেনি বলেই হয়েছিল! ওটা ভেবে রাখলে কোনও দিন হবে না!’’ মঞ্চে তখন উপস্থিত ডিএসপি, এসপি, এসইউসি, পিডিএস-সহ বিভিন্ন বাম দলের নেতারা।
প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদ জানাতে আজ, সোমবার কলেজ স্ট্রিটে মিছিল করবে এসএফআই। পরের দিন ১৭ বাম দলের ‘অকুপাই কলেজ স্ট্রিট’। মিছিল-মিটিংয়ের জন্য লালবাজার যে বিরাট ফর্ম পূরণ করতে বলছে, তার প্রসঙ্গ টেনে বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘পুলিশ মুচলেকা নিচ্ছে আন্দোলনের জন্য! স্বৈরতান্ত্রিক, অত্যাচারী ব্রিটিশ সরকারও এমন করেনি! প্রতিবাদ হবে কলেজ স্ট্রিটেই।’’