খয়রাশোল কেমন নির্মল হয়েছে, দেখে গেলেন বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত।
খোলা জায়গায় শৌচকর্ম আটকাতে ভোরে কোদাল হাতে পুকুর পাহারা দেওয়ার পরিশ্রম বৃথা যায়নি। পুরস্কার হিসাবে জেলার মোট ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্যতম নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের পুরস্কার আগেই পেয়েছে খয়রাশোল। এ বার সেই মুকুটে নতুন পালক যুক্ত হতে চলেছে।
পিছিয়ে পড়া জেলার পিছিয়ে থাকা ব্লক কী ভাবে সমস্ত প্রতিকূলতা ছাপিয়ে এমন সাফল্য পেল, এ বার সেটাই বিহার এবং ওড়িশা থেকে আসা প্রতিনিধি দলকে শেখাবে খয়রাশোল। এমনই জানালেন শুক্রবার খয়রাশোলে শৌচাগারের কাজ পরিদর্শনে আসা বিশ্ব ব্যাঙ্কের দুই প্রতিনিধি রঞ্জিত এবং অক্ষয় কাশ্যপ। খয়রাশোলে দীর্ঘক্ষণ কাটানোর পরে বিশ্বব্যাঙ্কের দুই প্রতিনিধি জেলাপ্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) বিধান রায় বলেন, ‘‘খয়রাশোলের কাজ দেখে ওঁরা উচ্ছ্বসিত। প্রথমে বিহারের প্রতিনিধি দল এলাকা দেখতে আসছে।’’
প্রসঙ্গত যে সব গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় নির্মল গ্রাম পঞ্চায়েতের সম্ভাবনা রয়েছে, এমন ২১টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বেছে নিয়ে একটি সুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু করা হয়েছিল। সেই তালিকায় খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েতও ছিল। জেলা প্রশাসন একই সঙ্গে বার্তা দিয়েছিল বাড়িতে বাড়িতে শৌচাগার বানানোই একমাত্র লক্ষ্য নয়, মূল লক্ষ্য উন্মুক্ত জায়গায় মল ত্যাগ আটকানো। যাতে যত্রতত্র ত্যাগ করা মল জলে মিশে দূষণ না ছ়ড়াতে পারে। একই সঙ্গে তা থেকে যাতে মশা-মাছিবাহিত রোগও না ছড়াতে পারে। সেটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
এই ভাবনাকেই মূল মন্ত্র করে এগিয়ে ছিল খয়রাশোল ব্লকের খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত। ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে ১০ হাজার জনসংখ্যা বিশিষ্ট ওই পঞ্চায়েতের আটটি গ্রামের মোট পরিবারের সংখ্যা ২০৭৫টি। মার্চ মাসের মধ্যে প্রত্যেকটি বাড়িতে শৌচাগার তৈরি করা হয়। যাঁদের বাড়িতে জায়গার সমস্যা ছিল, তাঁদের জন্য কমিউনিটি টয়লেট তৈরি করা হয়। কিন্তু শুধু শৌচাগার করে দিলেই হবে না, তা ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা দেখা দরকার। না হলে এলাকা কী ভাবে ‘নির্মল’ হবে? সে জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছিল খয়রাশোল গ্রাম পঞ্চায়েত।
শৌচাগার তৈরির সঙ্গেই তা ব্যবহার করলে কী সুবিধা এবং না ব্যবহারে কী কুফল তা নিয়ে এলাকায় জোরগার প্রচার চালানো হয়। কখনও মানব পুতুল নাচের মাধ্যেমে, কখনও বাউলগানের মাধ্যমে, কখনও বা এলাকায় গিয়ে শৌচাগার বিষয়ক সচেতনতা শিবিরও করা হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান ভূপেন্দ্রনাথ ঘোষ থেকে বিডিও তারকনাথ চন্দ্র, যুগ্ম বিডিও অভিষেক মিশ্র, পঞ্চায়েত সমিতির মহিলা সভাপতি অসীমা ধীবর, ব্লক ও পঞ্চায়েতের বিভিন্ন আধিকারিক, কর্মী ও স্বনির্ভরদলের সদস্যেরা সকলে ধারাবাহিক ভাবে এ নিয়ে লেগে ছিলেন। ভাল কথা বলে যে সবাইকে পথে আনা যাবে না, তাও জানা ছিল। তাই খোলা জায়গায় বা পুকুর পাড়ে যাতে কেউ শৌচকর্ম করতে না পারেন, সে জন্য ভোরে এলাকায় পাহারাও চলেছে।
কী ভাবে সমাজের বিভিন্নস্তরের মানুষ একটা ইউনিট হিসেবে কাজ করেছেন, এ দিন খয়রাশোলে এসে তা খুঁটিয়ে জেনে নেন দুই অতিথি। পরে খয়রাশোলের গোষ্ঠমেলা মাঠ সংলগ্ন পুকুর পাড়ে তৈরি হওয়া ১০টি শৌচাগার দেখেন তাঁরা। বিডিও তাঁদের জানান, ওই পাড়ায় জায়গার অভাব থাকায় সবার জন্য ওই শৌচাগারগুলি তৈরি করা হয়েছে।
অন্য জেলার সঙ্গে তুলনা টেনে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধি দলের সদস্য রঞ্জিত বলেন, ‘‘নদিয়া জেলা ভাল কাজ করেছে। সমস্যা ধরে ধরে একটা ইউনিট হিসাবে এগিয়েছে। এখানেও দলগত ভাবে ভালই কাজ হয়েছে। তবে খয়রাশোল পিছিয়ে পড়া এলাকা এবং জল সঙ্কটের মতো সমস্যা এড়িয়ে যে ভাবে এগিয়েছে, তা বিহার ও ওড়িশার প্রতিনিধি দলের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করছি।’’