সরেও সরলেন না ভারতী ঘোষ

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপি পদ থেকে সরলেও আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কার্যত জঙ্গলমহলে থেকে যাচ্ছেন ভারতী ঘোষ। শুক্রবার সরকারি নির্দেশ জারি করে ভারতীদেবীকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে মাওবাদী দমনে নিযুক্ত বিশেষ বাহিনীর প্রধান করা হয়েছে (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি, এলডব্লিউই অপারেশনস্)।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:১১
Share:

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপি পদ থেকে সরলেও আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে কার্যত জঙ্গলমহলে থেকে যাচ্ছেন ভারতী ঘোষ। শুক্রবার সরকারি নির্দেশ জারি করে ভারতীদেবীকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি পদ থেকে সরিয়ে তাঁকে মাওবাদী দমনে নিযুক্ত বিশেষ বাহিনীর প্রধান করা হয়েছে (অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি, এলডব্লিউই অপারেশনস্)। ইএফআরের প্রথম ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডান্ট বাদনা বরুণ চন্দ্রশেখরকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপি পদে পাঠানো হচ্ছে। এতদিন সিনিয়র আইপিএস পুলিশ অফিসাররা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপি পদের দায়িত্ব সামলেছেন। তবে বাদনা বরুণ অবশ্য ভারতীদেবীর থেকে জুনিয়র ব্যাচের অফিসার। ফলে, ভারতীদেবীকে এই নতুন পদের দায়িত্ব দেওয়া কার্যক্ষেত্রে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশে তাঁর কর্তৃত্ব ও প্রভাব বজায় রাখারই অঙ্গ বলে পুলিশ মহলের ধারণা। মুখমন্ত্রীর ‘গুডবুকে’ থাকা ভারতীর উত্থান শুরু তৃণমূলের সরকার ক্ষমতায় আসার পরে।

Advertisement

বাম জমানায় তিনি ছিলেন সিআইডির সন্ত্রাস দমন শাখার অফিসার। রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে ভারতীদেবীকে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার (সদর) পদে নিয়ে আসা হয়। ২০১২ সালের এপ্রিলে ঝাড়গ্রামের এসপি হন তিনি। ২০১৩ সালের অগস্টে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এসপি হন ভারতী। সেই সঙ্গে ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার ভারপ্রাপ্ত এসপিরও দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। বার বার বিতর্কে জড়িয়েছেন ভারতীদেবী। তাঁর বিরুদ্ধে শাসক তৃণমূলের হয়ে কাজ করার অভিযোগে বারে বারে সোচ্চার হয়েছেন বিরোধীরা। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ভারতীদেবীকে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রামের এসপি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ভোটের পর ফের দু’টি পদেই তাঁকে ফেরানো হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে এবং চলতি বছরের জানুয়ারির গোড়ায় মেদিনীপুরে প্রকাশ্য সভায় মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জঙ্গলমহলের মা’ সম্বোধন করে বিরোধীদের তোপের মুখে পড়েন ভারতী। গত বছর খড়্গপুর পুরবোর্ড গঠনের সময় ভারতীদেবীর পরিকল্পনা মাফিক তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাউন্সিলর কেনাবেচার অভিযোগ তোলেন বিরোধীরা। গত বছর জুনে খড়্গপুর পুরবোর্ড গঠনের পর তৃণমূলের খড়্গপুর শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর সঙ্গে করমর্দন করে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন ভারতী। নানা সময়ে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের একের পর এক মিথ্যে মামলায় ফাঁসিয়ে গ্রেফতার করার অভিযোগ ওঠে। সবং কলেজে ছাত্রপরিষদ কর্মী খুনের মামলার চার্জশিটে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি অনুযায়ী, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুনের তত্ত্বকে মান্যতা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ভারতীর বিরুদ্ধে। পিংলায় বিস্ফোরণ কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন বিয়েবাড়ির জন্য বাজি তৈরি হচ্ছিল। চার্জশিটে বোমা কারখানার পরিবর্তে বাজি কাখানার কথা বলা হয়।

২ জানুয়ারি ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার নতুন এসপি-র দায়িত্ব নেন সুখেন্দু হীরা। তিনি বারাকপুরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের ৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডান্ট ছিলেন। কিন্তু তারপরও গত ২৪ জানুয়ারি বেলপাহাড়ির চিড়াকুটি গ্রামে পুলিশের জনসংযোগ অনুষ্ঠানে জেলার তৃণমূল নেতাদের মঞ্চে বসিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের পোশাক, কম্বল, উপহার বিলি করার অভিযোগ ওঠে ভারতীর বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনে তথ্য-প্রমাণ সহ অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেতা মানস ভূঁইয়া।

Advertisement

ভারতী যে নতুন বাহিনীর দায়িত্ব পেলেন, ওই বাহিনী জঙ্গলমহলের মাওবাদী কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করবে। বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, ভারতীদেবীকে নতুন পদের দায়িত্ব দিয়ে জঙ্গলমহলের বিধানসভা আসনগুলিতে জয়ের পথ সুনিশ্চিত করতে চাইছে শাসক দল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement