বৃহস্পতিবার বিজিবিএসের শেষ দিনে বসেছিল রাজ্যে গ্যাস, খনি এবং কয়লা ক্ষেত্রে লগ্নি ও ব্যবসার সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষ আলোচনা চক্র। তারই মঞ্চে দেশ-বিদেশের শিল্প-কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের (বিজিবিএস) প্রথম দিনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস-গ্রিডে জুড়বে পশ্চিমবঙ্গ। বৃহস্পতিবার সম্মেলনের শেষ দিনে হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম (এইচপিসিএল) জানাল, রাজ্যের বাকি থাকা চার জেলায় সেই গ্যাস বণ্টনের বরাত পেয়েছে তারা। এর ফলে সবক’টি জেলাতেই গ্যাস বণ্টন পরিকাঠামোর বরাত দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হল। গ্যাস সরবরাহের জন্য প্রধান পাইপলাইনের নির্মাতা তথা গ্যাসের জোগানদার গেল-এর আশ্বাস, নির্ধারিত সূচি মেনেই দুর্গাপুর থেকে কলকাতাকে ছুঁয়ে হলদিয়া পর্যন্ত পাইপলাইন পৌঁছবে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে।
মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস আনতে গেল-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। পরে মমতা প্রকল্পটি নিয়ে উদ্যোগী হন। জমি ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া নিয়ে কোথাও কোথাও জট বাধায় পাইপলাইন বসানোর কাজ কিছুটা ধাক্কা খেলেও, নবান্ন সেই জট দ্রুত কাটাতে নির্দেশ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনগুলিকে।
বিজিবিএসে এ দিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নির সম্ভাবনা নিয়ে আলাদা করে একাধিক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল রাজ্য। এর মধ্যে গ্যাস, খনি ও কয়লা ক্ষেত্রের সভায় গেল-এর ডিরেক্টর (বিজ়নেস ডেভলপমেন্ট) এম ভি আইয়ার জানান, ১৫টি জেলা জুড়ে তাদের পাইপলাইন গড়ার যে কাজ চলছে, তাতে লগ্নির অঙ্ক প্রায় ৪০০০ কোটি টাকা। দুর্গাপুর পর্যন্ত পাইপলাইনের কাজ শেষ। সেখান থেকে কলকাতাকে ছুঁয়ে হলদিয়া পর্যন্ত ৩১৫ কিলোমিটারের কাজ ২০২৩-এর জুন-সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্পূর্ণ হওয়ার আশা। গোটা দেশেই পাইপলাইন পাতার জন্য জমি পাওয়ার সমস্যার কথা জানালেও তাঁর দাবি, এ রাজ্যে সরকার জট কাটাতে সাহায্য করছে।
এ দিকে, রাজ্যের চার জেলায় (বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ এবং দক্ষিণ দিনাজপুর) পরিবহণ জ্বালানি অর্থাৎ সিএনজি এবং পাইপলাইন মারফত বাড়িতে রান্নার গ্যাস এবং শিল্পের জ্বালানি অর্থাৎ পিএনজি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস বণ্টনের পরিকাঠামো গড়তে ১১-এ দফায় সম্প্রতি দরপত্র চেয়েছিল এই ক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রক পিএনজিআরবি। বৃহস্পতিবার শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে এইচপিসিএলের জিএম সঞ্জয় ঘোষ জানান, সেই প্রক্রিয়ায় জয়ী হয়েছেন তাঁরা। আগে বরাত পাওয়া আট জেলায় বণ্টনের পরিকাঠামো গড়তে সংস্থা ঢেলেছিল ৫৮০০ কোটি। এখন তা বেড়ে হবে ৮০০০ কোটি টাকা। হুগলিতে দু’টি এবং নদিয়ায় একটি সিএনজি স্টেশন খুলেছে সংস্থা। মে মাসের শেষে নদিয়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি ও হাওড়ায় আরও ১২টি চালু হবে। ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যে হুগলি, নদিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা এবং উত্তর দিনাজপুরের প্রতিটি জায়গায় ৫০০০টি করে পরিবারে পিএনজি সংযোগ দেওয়ার লক্ষ্য।
অন্যান্য জেলায় গ্যাস বণ্টনের বরাত পাওয়া বেঙ্গল গ্যাস এবং আওইসি-আদানি গ্যাস প্রথম পর্যায়ে যথাক্রমে ৫০০০ কোটি ও ১২০০ কোটি টাকা লগ্নি করছে। সেই কাজ ক’বছর আগেই শুরু হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে আরও কয়েকটি জেলায় আইওসি এবং বিপিসিএল আলাদা ভাবে সেই বরাত পেয়েছে। তারাও বিনিয়োগ করবে। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, সবক’টি প্রকল্পের হাত ধরে রাজ্যে এক দিকে যেমন প্রাকৃতিক গ্যাস নির্ভর বিকল্প জ্বালানির জোগান সূত্র গড়ে উঠবে, তেমনই তৈরি হবে নতুন কাজও। এই দিন ওএনজিসি-র ডিরেক্টর (এক্সপ্লোরেশন) আর কে শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, অশোকনগরে অশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস খননের কাজে তিন-চার বছরে ১৫০০ কোটি লগ্নি করছেন তাঁরা।