Mamata Banerjee-Suvendu Adhikari

মমতা-শুভেন্দু তরজার মধ্যে শিশিরের সম্পত্তি বৃদ্ধির হিসাব দিলেন কুণাল, পাল্টা কী জবাব অধিকারী কর্তার?

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ ছোড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অধিকারী পরিবারকে নিশানা করলেন কুণাল। প্রকাশ্যে আনলেন শুভেন্দুর পিতা শিশিরের সম্পত্তির হিসাব।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ নভেম্বর ২০২৩ ১৬:১৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

সম্পত্তি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আয়কর রিটার্নের নথি প্রকাশ্যে এনে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। আবার তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অধিকারী পরিবারকে নিশানা করলেন তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। প্রকাশ্যে আনলেন অধিকারী পরিবারের কর্তা তথা শুভেন্দুর পিতা শিশির অধিকারীর সম্পত্তির হিসাব। ঘটনাচক্রে, শিশির এখনও খাতায়কলমে তৃণমূলের সাংসদ। শাসক তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল জানিয়েছেন, নির্বাচনী হলফনামায় দেখা যাচ্ছে, এক বছরে শিশিরের সম্পত্তি ১০ কোটি টাকা হয়েছে। ১৬ লক্ষ টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা! কোন জাদুতে এই সম্পত্তি বৃদ্ধি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। তার প্রেক্ষিতে পাল্টা জবাবও দিয়েছেন শিশির।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোবে’ মন্তব্যের পরেই শুক্রবার এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) নিজের আয়কর রিটার্নের নথি পোস্ট করেছিলেন শুভেন্দু। লিখেছিলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে সিআইডি, এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ, ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চকে দিয়ে তদন্ত করান। আয়কর রিটার্নের বাইরে এক পয়সাও উপার্জন করেছি বা এ রকম কোনও সম্পদ বা সম্পত্তি আছে কি না, তা প্রমাণ করুন।’’ এর পরেই মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বিরোধী দলনেতা লিখেছিলেন, ‘‘কালীঘাটে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে যেখানে আপনি জমি দখল করে বাস করছেন, তার চুক্তি প্রকাশ্যে আনুন। জমির দখল বৈধ না অবৈধ, সেটা সবাইকে জানতে দিচ্ছেন না কেন? আশা করি, আপনি আমার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন।’’

শুভেন্দু চ্যালেঞ্জ ছোড়ার পরেই আসরে নামেন কুণাল। শুক্রবারই সাংবাদিক বৈঠকে তিনি জানিয়েছিলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অধিকারী পরিবারের সম্পত্তির তথ্য প্রকাশ্যে আনা হবে। তথ্য পরিসংখ্যান দিয়ে দেখানো হবে, কী কী অনিয়ম হয়েছে। সেই মতোই শনিবার এক্স হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করেন কুণাল। নথি দেখিয়ে পোস্টে তিনি জানান, ২০০৯ সালে শিশির যখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, তখন নির্বাচনী হলফনামায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১০ লক্ষ টাকা। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১২ সালে সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে আবার তিন কোটি। কুণাল প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যান সত্য না মিথ্যা? ১০ লক্ষ থেকে কী ভাবে ১০ কোটি হল? আবার ১০ কোটি কমে তিন কোটি হল কী করে? এটা কি ম্যাজিক?’’

Advertisement

এই পোস্ট ঘিরে তরজার মধ্যে শনিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকও করেন কুণাল। নথি দেখিয়েই তিনি দাবি করেন, ২০১১ সালে শিশিরের সম্পত্তি ১৬ লক্ষ টাকা ছিল। সেটাই ২০১২ সালে বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি টাকা। তৃণমূল মুখপাত্র বলেন, ‘‘সম্পত্তি বৃদ্ধির সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলেন শিশির অধিকারী। এক বছরে ১০ কোটি টাকার সম্পত্তি? কী ভাবে সম্ভব এটা? আর শুভেন্দু বাকিদের দিকে আঙুল তুলছেন!’’ তাঁর প্রকাশ্যে আনা তথ্য ঠিক না ভুল, তার জবাব শিশিরের থেকে চেয়েছেন কুণাল।

তৃণমূল মুখপাত্রের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে শিশির বলেন, ‘‘সারদায় জেল খাটা আসামির প্রশ্নের কোনও জবাব আমি দেব না। ১৯৬৮ সাল থেকে আমি আয়কর দিচ্ছি। সব রেকর্ড আছে। কেউ চাইলে দেখে নিতে পারে।’’

প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের গ্রেফতারি ও তার পরবর্তী পরিস্থিতিতে বুধবার মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘‘কারও কারও ৬০-৭০-৮০টি ট্রলার আছে, নানা লোকেই বলে। কত বেনামি বাড়ি আছে, কত পেট্রল পাম্প আছে, কত কোটি কোটি টাকা রয়েছে। তারা বড় বড় কথা বলে কী করে? এত দিন করিনি, এ বার আমরাও কাগজপত্র বার করছি।’’ এর পর বৃহস্পতিবারই নিজের ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষের আয়কর রিটার্নের নথি পোস্ট করেন শুভেন্দু। এক্স হ্যান্ডলে মমতাকে নিশানা করে লেখেন, ‘‘গত কাল আপনি আমাকে আক্রমণ করেছেন এবং আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন। যদিও আমার নাম নেওয়ার সাহস আপনার হয়নি।’’ মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে মন্তব্য করে বিরোধী দলনেতা এ-ও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, আপনি শুনে রাখুন। আপনার ভাইপো, আপনার পরিবারের ইনকাম ট্যাক্সে কিছুই দেখানো নেই। আমার সবই দেখানো আছে।’’ পেট্রল পাম্পের প্রসঙ্গ টেনেও শুভেন্দু বলেন, ‘‘পেট্রল পাম্প সব বৈধ। আপনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে থেকে আছে ওই পেট্রল পাম্প। একুশ সালের শুভেন্দু অধিকারীর হলফনামা দেখে নেবেন আপনি।’’ শুভেন্দুর ওই আক্রমণের পরেই পাল্টা আক্রমণ শানালেন কুণাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement