গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সুতপার সঙ্গে ‘সম্পর্ক’ ভেঙে যেতেই তাঁর ইংরেজবাজারের বাড়িতে দলবল নিয়ে চড়াও হয়েছিল সুশান্ত চৌধুরী। গত বছর দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিনের এই ঘটনার সময় সুতপাকে গালিগালাজও করে সে। এমনকি, ওই ঘটনার পরেও তাঁকে বার বার উত্যক্ত করে গিয়েছে সুশান্ত। সুতপা চৌধুরীর বাবার করা এই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে মঙ্গলবার মালদহের ইংরেজবাজারে পৌঁছয় বহরমপুরের পুলিশ। পাশাপাশি, সুশান্তের দাবি মতো সুতপার সঙ্গে তাঁর ‘সম্পর্ক’ কতটা গভীর ছিল, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে বলে সূত্রের খবর।
সুতপা-খুনের তদন্তে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ইংরেজবাজারে আসে বহরমপুর থানার তদন্তকারীদের দল। তদন্তকারী আধিকারিক-সহ চার জনের ওই দলটি প্রথমে বৈষ্ণবনগর থানা এলাকার রাজনগরে সুতপাদের গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখানে তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন গোয়েন্দারা। এর পর সুতপার বাবা স্বাধীন চৌধুরীকে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের ইংরেজবাজারের এয়ারভিউ কমপ্লেক্সের বাড়িতে যান। সেখানে দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ছিলেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, বহরমপুরের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সুতপা চৌধুরীকে খুনের অভিযোগে ধৃত সুশান্তের বিরুদ্ধে ওঠা নানা দাবি-পাল্টা দাবি খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সুশান্তের দাবি, স্কুলজীবন থেকেই সুতপার সঙ্গে তাঁর পরিচয় এক সময় প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়েছিল। সুতপার বাড়িতে নিয়মিত যাতায়াতও ছিল তার। তাদের সম্পর্কের কথা সুতপার বাড়ির লোকজনও জানতেন। যদিও এ দাবি অস্বীকার করেন স্বাধীন। উল্টে স্বাধীনের দাবি, গত বছর পঞ্চমীর রাতে তাঁদের বাড়িতে বহিরাগত যুবকদের নিয়ে চড়াও হয়েছিল সুশান্ত। তাঁর অনুপস্থিতিতে মেয়েকে গালিগালাজও করে বলে অভিযোগ। এর পর পাড়ার ছেলেরা পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ইংরেজবাজারে তদন্তকারী দল। সঙ্গে ছিলেন সুতপার বাবা (বাঁ-দিকে) স্বাধীন চৌধুরী। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় সূত্রের দাবি, ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে সুতপাদের বাড়ি যেখানে, সেই এলাকায় একটি ক্লাবে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রসেনজিৎ ঘোষের নেতৃত্বে সালিশি সভা বসে। তাতে দুই পরিবারকেই ডাকা হয়েছিল। সেই সময়েও সুশান্ত দাবি করে, সুতপার সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। তবে ‘পরিবারের চাপে’ সুতপা প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেন। অভিযোগ, এর পর সুশান্তকে মারধরও করা হয়েছিল।
স্বাধীনের দাবি, দুর্গাপুজোর পর সুশান্ত বার বারই তাঁর মেয়েকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে উত্যক্ত করত। যার জন্য মেয়েকে বহু বার মোবাইলের নম্বর বদলাতে হয়েছে। মঙ্গলবার ইংরেজবাজারের বাড়িতে গিয়ে এ সবই খতিয়ে দেখছে পুলিশ। সূত্রের খবর, সুশান্তের সঙ্গে সুতপার ‘সম্পর্ক’ কতটা ‘গভীর’ ছিল বা আদৌ কোনও সম্পর্ক ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হবে। যদিও এ নিয়ে মুখ খোলেননি তদন্তকারীরা।
মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন স্বাধীনও। তিনি বলেন, ‘‘তদন্তকারীরা যা জানতে চেয়েছেন, সে সব কিছুই জানিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে এর বেশি আর কিছু মিডিয়াকে জানানো যাবে না।’’