ভোটের পরেও হিংসা অব্যাহত রাজ্যে। ফাইল চিত্র।
রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে হিংসায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ল। সোমবার রাত পর্যন্ত ভোট-সন্ত্রাসে মৃত্যু হয়েছিল ১৪ জনের। মঙ্গলবার শুধু উত্তরবঙ্গেই আরও চার জনের মৃত্যু হয়েছে। তাঁদের একজন তৃণমূলের। নদিয়া ও দুই ২৪ পগরনায় এদিন তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। সকলেই তৃণমূল সমর্থক। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা এখনও পর্যন্ত ২১।
ভোটের পরেও হিংসা থামেনি। কলকাতার লাগোয়া রাজারহাটের জ্যাংড়া-হাতিয়াড়ায় সোমবার রাতে হামলার মুখে পড়ে পুলিশও। দু’জন পুলিশ আধিকারিক আহত হন। ২৪ জনকে গ্রেফতার করে নিউটাউন থানা। পরে মঙ্গলবার সকালে বিজেপির নেতৃত্বে থানার সামনে বিক্ষোভ হলে পুলিস লাঠি চালায়। বিজেপি প্রার্থী অজিত মন্ডল সহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়।
এদিনই নদিয়ার ধানতলায় প্রণব বিশ্বাস নামে এক তৃণমূল সমর্থককে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে। তৃণমূলের অভিযোগ বিজেপির দিকে। বিজেপির জেলা সভাপতি জগন্নাথ সরকার অবশ্য এই ঘটনাকে জনরোষ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। ভোটের দিন উত্তর ২৪ পরগনার হাবরায় ‘গণপিটুনি’তে জখম সুশীল দাস নামে আরেক তৃণমূল সমর্থক এদিন বারাসত হাসপাতালে মারা গিয়েছেন। ভোটের দিন মারধরে জখম আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলিতে। ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের অভিযোগে ভোটের দিনই সুবিদ আলি মোল্লা নামে ওই যুবক ব্যাপক মারধর করা হয়। এদিন তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
আরও পড়ুন:
‘অশান্ত বাংলায় নিহত গণতন্ত্র’, পঞ্চায়েত নিয়ে চড়া আক্রমণে মোদী
১৯ জেলায় ৫৭৩ বুথে আজ ভোট
এদিন উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে মারা গিয়েছেন গৌরচন্দ্র সরকার নামে এক প্রৌঢ়। দক্ষিণ দিনাজপুরের তপনেও মৃত্যু হয়েছে একজনের। মৃতের নাম জিল্লুর রহমান। ভোটের দিন উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরে একাধিক জায়গায় শাসক ও বিরোধীদের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। দুই জেলাতেই ভোটের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অশান্তি ও গোলমালের কারণে যে সব বুথে কমিশন পুনর্বির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার মধ্যে দুই দিনাজপুরও রয়েছে। ভোটের দিন গভীর রাতে মালদহের শাহগঞ্জচকের গোলাবাড়ি এলাকায় একটি বুথের সামনেই গুলিবিদ্ধ হন সানাউল্লা নামে এক তৃণমূল কর্মী। পরে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার জেরে এদিন এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। কোচবিহারের সুটকাবাড়িতেোও তৃণমূল ও ‘বিক্ষুব্ধ তৃণমূলে’র সংঘর্ষে গুরুতর জখম হন জিন্নাতুল হক নামে এক যুবক। স্থানীয় এক নির্দল প্রার্থীর ওই সমর্থক এদিন মারা গিয়েছেন।
ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে একাধিক জেলায়। এদিনই পশ্চিম বর্ধমানের কাঁকসায় এক স্কুল শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তাদের দাবি, জেলা পরিষদের বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় এদিন গামছায় মুখ ঢেকে একটি দল স্কুলে ঢুকে আক্রমণ করে ওই শিক্ষককে। তৃণমূল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, এই মারধরের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ের খাকুরদহে তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তেজনা ছড়ায়। এক দলীয় সমর্থকের বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। জেলারই সবংয়ে ধামসাইয়ে তাদের একাধিক সমর্থকের বাড়িতে তৃণমূল হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সিপিএম। তৃণমূলের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ উঠেছে পটাশপুরেও।