ভোটহীন গ্রামে বোমা ফেটে মৃত ২

পঞ্চায়েত ভোটের রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগর ২ ব্লকের উত্তর বরোজ গ্রামে বিস্ফোরণে মৃত্যু হল দু’জনের। বোমা ফেটেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

Advertisement

রাজকুমার গিরি

ভূপতিনগর শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৮ ০৪:১৪
Share:

নিহত: গোকুল মেইকাপ ও গোকুল বারুই। নিজস্ব চিত্র

গ্রামে কোনও ভোট নেই। ত্রিস্তরেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় নিশ্চিত করে ফেলেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। তবুও সেই গ্রামে মৃত্যু!

Advertisement

পঞ্চায়েত ভোটের রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভূপতিনগর ২ ব্লকের উত্তর বরোজ গ্রামে বিস্ফোরণে মৃত্যু হল দু’জনের। বোমা ফেটেই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাত পৌনে ন’টা নাগাদ জোরাল শব্দে কেঁপে ওঠে বরোজ গ্রাম পঞ্চায়েতের উত্তর বরোজ গ্রাম। গ্রামের লোকজন ছুটে গিয়ে দেখেন, ফাঁকা মাঠে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। পরে সেই মাঠেই পাওয়া যায় দু’টি ছিন্নভিন্ন দেহ। মৃত গোকুল বারুই (৫০) এবং গোকুল মেইকাপ (৬১)-এর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। পরিজন এবং এলাকাবাসীর দাবি, মৃতেরা তৃণমূল সমর্থক ছিলেন। যদিও তৃণমূলের দাবি, তাঁরা সিপিএম করতেন। আর পুলিশের ব্যাখ্যা, ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। কাঁথির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘বোমা অথবা বাজি ফেটে ওই দু’জন মারা গিয়েছেন। এলাকায় কোনও ভোট ছিল না। ঘটনার সঙ্গেও রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’

Advertisement

গোকুল বারুই ও গোকুল মেইকাপ দু’জনেরই ছোটখাট ভেড়ি রয়েছে। গোকুল মেইকাপের দাদা নবীন মেইকাপ বলেন, ‘‘আমাদের গোটা পরিবারই তৃণমূল সমর্থক। ভাইও তৃণমূলকে সমর্থন করত। তবে সক্রিয় রাজনীতিতে ছিল না। ভেড়ি নিয়েই ব্যস্ত থাকত।’’ ফলে, তিনি কীভাবে বোমা ফেটে মারা
গেলেন, সেই ব্যাখ্যা নবীনবাবুদের কাছে স্পষ্ট নয়। গোকুল বারুইয়ের স্ত্রী মিনুদেবীর কথায়, ‘‘সোমবার সন্ধে আটটা নাগাদ বাড়ি ফিরে আমার স্বামী খেতে চাইল। বলল, ‘কাজ আছে, ভেড়িতে যেতে হবে।’ সাড়ে আটটা নাগাদ চলেও গেল। তখনও বুঝিনি সেই শেষ যাওয়া।’’ এলাকাবাসীও জানালেন, মৃতেরা তৃণমূলের সমর্থক ছিলেন।

যদিও সে কথা মানতে নারাজ শাসকদল। গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী পঞ্চায়েত প্রধান, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাঁর জয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে সেই মিহির ভুঁইয়ার দাবি, ‘‘মৃতেরা সিপিএম কর্মী ছিলেন। এলাকায় সন্ত্রাস তৈরির জন্য বোমা বাঁধার সময়ই তাঁদের মৃত্যু হয়েছে।’’ সিপিএমের মুগবেড়িয়া ২ এরিয়া কমিটির সম্পাদক অমলেন্দু দাস অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই এলাকায় দলের কোন সংগঠন‌ নেই। প্রার্থীও দিতে পারিনি। ফলে সেখানে আমাদের সমর্থকেরা বোমা বাঁধবেন, এটা সম্ভব নয়।’’ সিপিএমের দাবি, ওই গ্রামে ভোট না হলেও আশপাশে এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে বিরোধীরা তৃণমূলকে টক্কর দিয়েছে। তাই ভোটের ফলে হেরফের হলে সেখানে সন্ত্রাস চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল শাসকদল। তাই বোমা বাঁধা হচ্ছিল উত্তর বরোজে। তখনই বিস্ফোরণে দু’জন মারা যায়।

এই চাপানউতোরের মধ্যে গোটা গ্রামে ঘুরপাক খাচ্ছে একটাই প্রশ্ন— ভোট হল না, তবু কেন মরতে হল দু’-দু’টো মানুষকে!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement