পঞ্চায়েতে রাজনৈতিক দলের প্রতীক ছাড়লে হিংসা কমবে কি, ফিরছে তর্ক

পঞ্চায়েত সম্পর্কে গাঁধীজির ধারণা ছিল প্রকৃত গ্রামসভা অর্থে। পরবর্তী কালে জয়প্রকাশ নারায়ণ তাঁর দলহীন গণতন্ত্রের তত্ত্বের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রতীকহীন পঞ্চায়েতের প্রস্তাব সামনে রেখেছিলেন।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৪৫
Share:

আবার সে এসেছে ফিরিয়া! একটি পুরনো ভাবনা।

Advertisement

সে প্রস্তাব সত্তর দশকে এসেছিল এই বাংলাতেও। কিন্তু রাজি হয়নি বামেরা। খারিজ হয়ে যাওয়া সেই প্রস্তাবই এখন আবার অল্পস্বল্প মাথা তুলছে এই বাংলায়।

রাজ্য সরকার বা কোনও বিরোধী দল অবশ্য এমন প্রস্তাব তোলেনি। আলোচনা শুরু করেছে পঞ্চায়েত পরিষদ। জাতীয় স্তরে অরাজনৈতিক সংস্থাটির কিছু দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন জয়প্রকাশও। পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে গ্রামের মানুষের প্রকৃত উপকারে কী ভাবে ব্যবহার করা যায়, সেই লক্ষ্যেই গোটা দেশে কাজ করে অখিল ভারতীয় পঞ্চায়েত পরিষদ। এখন যার সভাপতি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুবোধকান্ত সহায়। বাংলায় পঞ্চায়েত পরিষদের শাখা আত্মপ্রকাশ করেছে গত বছর। হিংসা রুখতে তারাই এখন প্রতীকহীন পঞ্চায়েতের এবং পাশাপাশি গ্রামসভার হাতে প্রকৃত ক্ষমতার দাবিতে জনমত তৈরির প্রয়াস শুরু করেছে।

Advertisement

পরিষদের সঙ্গে যুক্ত পঞ্চায়েতের বেশ কিছু প্রাক্তন জনপ্রতিনিধি, প্রাক্তন আমলা ও গবেষকদের যুক্তি, বাংলা, কেরল, ত্রিপুরা ও কর্নাটকে মূলত রাজনৈতিক দলের হাতেই পঞ্চায়েত। কিন্তু মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশের মতো বেশ কিছু রাজ্যে পঞ্চায়েতে রাজনৈতিক দলের প্রতীক ছাড়়া লড়াই হয়। পরিষদের সভাতেই রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সচিব বরুণ দাশগুপ্ত যেমন বলেছেন, বাংলায় ১৯৭৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং দলের প্রবেশ ঘটার পরে গ্রামের সব কিছুই রাজনীতির সঙ্কীর্ণতায় আবদ্ধ হয়েছে। দুর্নীতি, খুনোখুনি হয়েছে। এই পরিণতির জন্য বামেদের দিকেই আঙুল তুলে অনেকের প্রস্তাব, প্রতীক ছাড়়া লড়াই হলে ছবি বদলাতে পারে।

বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু মেনে নিচ্ছেন, ‘‘১৯৭৮ সালেই প্রফুল্ল সেন প্রতীকহীন নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্যের বৈশিষ্ট্য মাথায় রেখে আমাদের মনে হয়েছিল, তাতে লাভ নেই।’’ বিমানবাবুর যুক্তি, বাংলায় বরাবরই রাজনৈতিক ধারণা এমন প্রবল যে, বামপন্থী শিক্ষক বা শ্রমিক সংগঠনের বহু সদস্য যাঁরা দলের কেউ নন, তাঁদেরও জনমানসে ‘সিপিএম’ বলেই ধরা হয়। বিমানবাবুর মতে, প্রতীক তুলে নিলেও কারও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অধিকার তো কেড়ে নেওয়া যায় না। তাই সাধারণ ভাবে সিপিএম, তৃণমূল বা কংগ্রেস বলে পরিচিত মানুষ সেই ভোটে লড়বেন এবং সেই পথে বকলমে দলও ঢুকবে। তার চেয়ে সরাসরি রাজনৈতিক লড়াই শ্রেয়।

তৃণমূলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ও বলছেন, ‘‘বিহারে প্রতীক ছাড়া ভোট হত, তাতেও বহু মানুষ মারা গিয়েছেন। আর বাংলার মতো রাজনৈতিক মেরুকরণের রাজ্যে তো এটা আরওই সহজ সমাধান নয়!’’ পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘নির্বাচনের সময়ে এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না।’’

পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত পরিষদের সভাপতি দেবপ্রসাদ রায় যদিও মনে করেন, ‘‘আগে নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাস ছিল, এখন লাগামছাড়া সন্ত্রাস। প্রতীক বাদ দিলে যদি ১০%-ও হিংসা কমানো যায়, ভেবে দেখতে ক্ষতি কী?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement