দু’দিন আগেই বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে একমাত্র ‘বামপন্থী’ বলে শংসাপত্র দিয়েছিলেন। সেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের কাজকর্মের বিরুদ্ধেই এ বার মুখ খুললেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। এক দিকে তিনি নির্বাচন থেকে সরে আসার ভাবনা ছেড়ে সর্বশক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য বামপন্থী কর্মীদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই সঙ্গেই ডাক দিয়েছেন, ‘এ রাজ্যের শাসক দলকে যেমন পরাস্ত করতে হবে, তেমনই বিজেপির জয়ের কলঙ্ক থেকে পশ্চিমবঙ্গকে মুক্ত রাখতে হবে’।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন, গত ৬ মাস ধরে অসুস্থতার কারণে তিনি গৃহবন্দি। কিন্তু কিছু দিন ধরে বাম কর্মী, প্রার্থী ও পরিবারের উপরে আক্রমণ করে তাঁদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে বুদ্ধবাবুর অভিযোগ। তাতে ‘উদ্বিগ্ন’ হয়েই তিনি মুখ খুলছেন। দলের মারফত বৃহস্পতিবার রাতে দেওয়া বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যে পঞ্চায়েতি ব্যবস্থার পথিকৃৎ ও রূপকার বামফ্রন্ট। এই ব্যবস্থাকে বর্তমান শাসক অনেকটা কলুষিত করেছে। জনগণের স্বাধীন অধিকার কেড়ে নিয়েছে শাসক দলের কর্মীরা। ভয়ঙ্কর দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে’।
অসুস্থ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর খোঁজ নিতে সাম্প্রতিক কালে দু’বার তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমান যে দিন সৌজন্যে দেখাতে প্রাক্তনের বাড়িতে গিয়েছিলেন, সে দিনই বীরভূমে মনোনয়ন ঘিরে শাসক দলের আক্রমণের মুখে রক্তাক্ত হয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র ডোম। হামলার অভিযোগ যত বেড়েছে, সিপিএম নেতা-কর্মীদের একাংশ ততই দাবি করেছেন যে, এই পরিস্থিতিতে মুখ খুলুন বুদ্ধবাবু। নইলে ‘ভুল বার্তা’ যাচ্ছে। পার্টি কংগ্রেস থেকে ফিরে আলিমুদ্দিনের নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে রাজ্যের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন বুদ্ধবাবু। তার পরেই এই বিবৃতি এবং রাতের মধ্যেই দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন বাম কর্মীরা।
বুদ্ধবাবু এ দিন বলেছেন, ‘পঞ্চায়েতের উপরে জনগণের কর্তৃত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই লক্ষ্যে আমার আবেদন, আমাদের পার্টির এবং বাম শিবিরের সব কর্মী ঐক্যবদ্ধ হোন। জনসাধারণের কাছে আমাদের পৌঁছতেই হবে এবং তা নির্বাচন থেকে সরে এসে নয়। আক্রমণ-সন্ত্রাসকে রুখে জনগণকে নিয়েই এগোতে হবে। কারণ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের লড়াই রুটি-রুজি, জীবন-জীবিকার লড়াই’। প্রতি কেন্দ্র ও প্রতি বুথে লড়াইয়ের ডাক দিয়ে বুদ্ধবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, তিনি ‘বামপন্থা ও মানুষের শক্তিতে বিশ্বাসী’।
বামফ্রন্টের শরিক ও বাইরের বাম মিলে ১৭টি দল বৈঠক করে এ দিনই ঠিক করেছে, ভোট বয়কট নয়। বরং, সুষ্ঠু ভোটের দাবিতে আগামী ৩-৪ মে তারা কলকাতার রাজপথে ধর্না-অবস্থান করবে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, ‘‘সরকার এত উন্নয়ন করেছে যে, উন্নয়নের মোড়কে মানুষের সব কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছে!’’