অণ্ডালে পুলিশের সঙ্গে বচসা সাংসদের। —নিজস্ব চিত্র
সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জেলার নানা প্রান্তে দৌড়লেন। কোথাও পড়লেন তৃণমূল কর্মীদের বিক্ষোভের মুখে। কোথাও আবার পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ালেন আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। পুলিশ আধিকারিককে হুঁশিয়ারি দিতেও শোনা গেল তাঁকে।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ লাউদোহায় ব্লক অফিসে পৌঁছন বাবুল। গাড়ি থেকে নামতেই ফরিদপুর (লাউদোহা) থানার ওসি অনির্বাণ বসু তাঁকে জানান, নিরাপত্তার জন্য আগে থেকে খবর দিয়ে এলে ভাল হত। বাবুল বলেন, ‘‘আমি এখানকার সাংসদ, আসতেই পারি।’’ এর পরেই তাঁকে ফিরে যেতে বলে জনা পঁচিশ যুবক টানা স্লোগান দিয়ে চলে।
পুলিশ বাবুলের কাছে জানতে চায়, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও ৮-১০টি গাড়ি নিয়ে তিনি কী ভাবে ঢুকলেন। বাবুল জানান, তিনি একটি গাড়িতে এসেছেন। অন্য একটি গাড়িতে এসেছেন দলের জেলা সভাপতি। বাকি গাড়ির দায়িত্ব তাঁর নয়। সেগুলি পুলিশ বাজেয়াপ্ত করতে পারে। বাবুলের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘আমাকে যে এত জন ঘিরে ধরেছে, ওরা এখানে রয়েছে কী ভাবে?’’ বিজেপি-র কোনও প্রার্থীই অবশ্য মনোনয়ন দিতে আসেননি। ঘণ্টাখানেক পরে ফিরে যাওয়ার সময়ে বাবুলের অভিযোগ, ‘‘৮টি আসনে মনোনয়ন দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রার্থীদের মাঝ রাস্তা থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে!’’
দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ বাবুল অণ্ডাল গ্রাম মোড়ে পৌঁছন। দলের প্রার্থীদের মনোনয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে অভিযোগে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। বাবুল অভিযোগ করেন, ব্লক অফিসে তাঁদের প্রার্থীদের মনোনয়নের কাগজ কেড়ে নিয়ে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে দাবি করেন তিনি। মিনিট পনেরোর মধ্যে অবরোধ তুলে দেয় পুলিশ। তখন অণ্ডালের ওসি সঞ্জয় চক্রবতীর সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন বাবুল। ওসি-কে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘তৃণমূল যে দিন ক্ষমতায় থাকবে না সে দিন আপনাকে জঙ্গলমহলে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’ ওসি অবশ্য পরে এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। অণ্ডাল থেকে বাবুল রানিগঞ্জে যান। সেখানেও সন্ত্রাসের অভিযোগ করেন। তিনি চলে যাওয়ার পরে রানিসায়ের মোড়ে জাতীয় সড়কে অবরোধ করতে যায় বিজেপি। পুলিশ তাদের তুলে দেয়।
দুপুর ২টো নাগাদ বারাবনি ব্লক অফিসের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাবুল। কিন্তু দোমহানি রেলগেটের কাছে তৃণমূলের লোকজন তাঁর গাড়ি আটকে দেয় বলে অভিযোগ। গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। বিকেল ৩টে নাগাদ বিক্ষোভকারীরা সরে যায়। এর পরে বাবুল অবস্থান শুরু করেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘আমি প্রার্থীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিতে এসেছিলাম। কিন্তু আমাদের ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। এই ঘটনার ভিডিও, ছবি নিয়ে আদালতে যাব।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনের অভিযোগ, ‘‘প্রচারে থাকার জন্য বাবুল সুপ্রিয় সকাল থেকে নাটক করেছেন। আমি নিজে নানা ব্লক অফিসে ঘুরেছি। কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার অলীক স্বপ্ন দেখছেন ওঁরা।’’ পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে কাউকে কোথাও বাধা দেওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছে নেই।’’