শাসনের ঘটনাস্থল। তৃণমূল নেতা সফিয়ার রহমান (ইনসেট)। নিজস্ব চিত্র।
বিজয় মিছিল থেকে তখন ঘন ঘন স্লোগান উঠছে, ‘তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ।’ বাতাসে সবুজ আবিরের ঘনঘটা। বিনা যুদ্ধে পঞ্চায়েতের দখল নেওয়ায় কর্মী-সমর্থকেরা আনন্দে মেতেছেন। মিছিলের সামনের সারিতে একগাল হাসি নিয়ে হাঁটছেন জয়ের মূল কাণ্ডারী সফিয়ার রহমান (৪৯)। গলায় কে যেন এসে গাঁদার মালা পরিয়ে দিয়ে গেল। একজন পরাল রজনীগন্ধার মালা। হঠাৎই কাটল সুর। ভিড়ের মধ্যে থেকে এক যুবক হঠাৎ লুঙ্গির কোঁচড় থেকে ছুরি বের করে চালিয়ে দিল সফিয়ারের পেটে। রক্তে লাল রজনীগন্ধার মালা। ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারালেন তিনি।
এক মুহূর্তের জন্য হতভম্ব ভিড়টা। সেই সুযোগে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল আততায়ী। কিন্তু হাজার মানুষের ভিড়টা তাকে সাপটে পেড়ে ফেলল মাটিতে। নিমেষের মধ্যে গণপিটুনিতে শেষ রজব আলি (৪২)।
বুধবার বিকেল ৫টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার শাসনের ফলতি-বেলিয়াঘাটা পঞ্চায়েত ভবনের সামনে, টাকি রোডে।
আরও পড়ুন: কিস্যু হয়নি! সন্ত্রাস নেই, দাবি মমতার, বিরোধীরা অনড়ই
এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত রজব। ঘটনাটিকে দলের গোষ্ঠীকোন্দল বলে মানছেন স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশও। যদিও এতে ‘বিরোধীদের চক্রান্ত’ দেখছেন তৃণমূল নেতারা। দলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সরাসরি সিপিএমের ঘাড়েই দোষ চাপিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও তো এক সময়ে বিরোধী ছিলাম। এ ভাবে তো মিছিলে ঢুকে কাউকে খুন করতে যাইনি।’’
যদিও সিপিএম নেতা ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘‘বিরোধীদের ওখানে ক্ষমতা কতটুকু? কেউ মনোনয়নই দিতে পারলেন না। সফিয়ারের দাপটে এলাকায় লোকের বুক কাঁপে। ওদের নিজেদের কোন্দলেই এই খুন।’’
২০১৩ সালের ভোটে ওই পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় এসেছিল বামেরা। পরে অনাস্থা এনে দখল নেয় তৃণমূল। ১৯ আসনের পঞ্চায়েতে এ বার ১৬টি আসনে শুধু তৃণমূলই প্রার্থী দিয়েছে। মাত্র ৩টি আসনে লড়ছে নির্দল। বিরোধী শিবির দাঁত ফোটাতে পারেনি। সে সবের ‘মূল কারিগর’ সফিয়ার, অভিযোগ বিরোধী শিবিরের। তাঁর বিরুদ্ধে দলের একাংশের ক্ষোভও স্থানীয় নেতৃত্বেরও অজানা নয়।
কী কারণে খুন হলেন তৃণমূল নেতা, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বারাসতের এসডিপিও দুর্বার বন্দ্যোপাধ্যায়। গণপিটুনির ঘটনায় অবশ্য কেউ ধরা পড়েনি। এলাকায় পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।