রাজ্যের সিভিল সার্ভিস সংগঠনের বার্ষিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী।—নিজস্ব চিত্র।
তাঁর তিন বছরের সরকারের ‘সাফল্য’ দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও প্রশংসিত হচ্ছে বলে দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানালেন, বাংলার ‘রিপোর্ট কার্ড’ সবাই নজরে রাখে। তা দিল্লিই হোক বা সিঙ্গাপুর। শুক্রবার হাওড়ার শরৎ সদনে রাজ্যের সিভিল সার্ভিস সংগঠনের বার্ষিক সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে ওই মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী।
তাঁর কথায়, “যে যাই করুন, বাংলার রিপোর্ট কার্ডটা দেখে নিন। গর্বের সঙ্গে বলছি, সিঙ্গাপুরে আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমরা খুশি, গর্বিত। এবং সেখানে আমাদের অফিসারদের, শিল্পপতিদের পারফরম্যান্স খুবই ভাল ছিল।” কেন্দ্রও বাংলাকে অনুসরণ করে বলে দাবি তাঁর। “দিল্লিই বলুন, যাদের ইচ্ছে বলুন, প্রতি দিন বাংলার রিপোর্ট কার্ড দেখিয়ে বলা হয়, বাংলা এটা করেছে। এইটাই করো, অন্য নাম দিয়ে।” মন্তব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
সরকারের এই ‘সাফল্যের’ কৃতিত্ব অবশ্য নিজে নেননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের প্রশংসা করেছেন। বলেছেন, “আপনার গর্ব যে, আপনি (কাজটা) শুরু করেছেন। এটাই আপনাদের কৃতিত্ব। অর্থাৎ, আপনারা আজ যা করছেন, আগামী দিন চলার পথে সারা বিশ্বে এটাই পাথেয় হবে। আমাদের অফিসারদের ডেকে ডেকে বলবে, আপনারা একটু বলে যান, কী করে কাজ করেন। কন্যাশ্রী দেখছেন তো, লন্ডনে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ন্যায্য মূল্যেও (ওষুধের দোকান) তাই, স্কিল ডেভেলপমেন্টেও তাই।”
মুখ্যমন্ত্রী যখন এই দাবি করছেন, তখন সারদা-কাণ্ডে তাঁর দল ও সরকারের একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কের নাম জড়ানোর অভিযোগে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য। মমতা এই দাবি করলেও তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেই রাজ্য জুড়ে সিন্ডিকেট রাজ কায়েম ও তোলাবাজির অভিযোগ উঠেছে। এই সরকারের আমলে বড় শিল্পের প্রস্তাব আসেনি। অনেকের দাবি, মমতা- সরকারের জমিনীতিতেই থমকেছে শিল্পের গতি, যার প্রভাব পড়েছে সর্বত্র। শিল্পমহলের একাংশের মতে, এ রাজ্যে তেমন কোনও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হচ্ছে না। যা হচ্ছে, তা হল উৎসব আর ‘ডোল-ইনাম’ বিলি।
এ দিনও ‘ডোল-ইনাম’ বিলির ব্যতিক্রম ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণা ছিল, বিডিওদের প্রচুর তথ্য রাখতে হচ্ছে। তাই তাঁদের প্রত্যেককে একটি করে ল্যাপটপ দেওয়া হবে। ডব্লিউবিসিএস অফিসারেরা এ বার থেকে আট বছর চাকরি করলে সরাসরি উপসচিব পদ পেয়ে যাবেন। সহ-সচিব পদে তাঁদের আর কাজ করতে হবে না। ৮ এবং ১৬ বছর চাকরির পরে বর্ধিত বেতনের দু’টি কিস্তি এক সঙ্গে পাবেন সিভিল সার্ভিস অফিসারেরা। ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের প্রাপ্তির ঝুলিতে থাকবে অন্তত দু’টি জেলাশাসক ও দফতরের সচিবের পদ। বিসিএস অফিসারদের জন্য ৫০টি যুগ্মসচিবের পদও বাড়িয়ে দিয়েছেন মমতা। তিনি জানান, ডব্লিউবিসিএস অফিসারদের জন্য আবাসন করবে রাজ্য। এ জন্য রাজারহাটে জমি চিহ্নিত করার নির্দেশ দেন। ওই অফিসারদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার কথা ভেবে সেন্ট্রাল স্কুলের ধাঁচে প্রতি জেলায় ‘মডেল স্কুল’ করার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা করার আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় খুশি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ চাকী। কর্মী সংগঠনের নেতাদের বক্তব্য, “ডিএ না পেলেও কিছু সুবিধের আশ্বাস পেলেন অফিসারেরা। আমরা কিছুই পাচ্ছি না।”