ছবি: সংগৃহীত।
২০২১ বিধানসভা ভোটের আগে আজ, সোমবার দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। ২০২১-র আগে আরও একটি বাজেট পেশের সুযোগ থাকলেও সেখানে ঘোষণা হবে মাত্র। আজকের পেশ হওয়া বাজেট প্রস্তাব থেকেই আগামী এক বছরের উন্নয়নের অভিমুখ ঠিক করবেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
২০১৯-২০’র বাজেটে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার কোটির ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছিল। তা সামাল দিতে এবং আগের নেওয়া ঋণের সুদ শুধতে বাজার থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রের মন্দা ভাবের কারণে এ বার জিএসটি বাবদ আয়ও যে বিরাট বাড়বে তেমন আশা করছেন না কেউ। কিন্তু আপাতত আশা রেখেই ২০২০-২১’র বাজেটে বিপুল পরিমাণ জিএসটি আদায়ের প্রস্তাব রাখতে পারেন অর্থমন্ত্রী। সেই আয়ের বড় অংশ নতুন প্রকল্পে ব্যয় হবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা বজায় রেখে বাংলার যুবক-যুবতীদের কাজের উপযোগী করাই হবে বাজেটের মূল লক্ষ্য। কর্মসংস্থান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হবে।’’
নবান্নের একটি সূত্রের খবর, বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের সরকার ইতিমধ্যেই আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। পাশাপাশি এনআরসি, সিএএ-র প্রতিবাদে পথে নেমে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। সরকার তাঁদের ব্যাপারেও কিছু সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নোটবন্দির সময়ে ভুক্তভোগীদের নিয়েও সরকার একই রকম পদক্ষেপ করেছিল। মৃতদের ক্ষতিপূরণের পাশাপাশি কাজ হারানোদের এককালীন ৫০ হাজার টাকা করে অনুদানের ব্যবস্থা করেছিল নবান্ন।
আরও পড়ুন: ঘুরেছে বছর, অশ্রুতে ফিরলেন সত্যজিৎ
যদিও নবান্নের একাংশের দাবি, কর্মীদের বর্ধিত বেতনের বাড়তি চাপ এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির বেহাল অবস্থার কারণে সামাজিক উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়ানো রীতিমতো কঠিন কাজ। কারণ, আশানুরূপ আয় বাড়ানোর সুযোগ রাজ্যের হাতে নেই। এমন পরিস্থিতিতে আয় বাড়িয়ে খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রক্রিয়া কী ভাবে অর্থমন্ত্রী সামলাবেন তা দেখার। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, চলতি বছরে পুরভোট ও আগামী বছরে বিধানসভা ভোটের কারণে এ বার বাড়তি খরচের চাপ রয়েছে। সরাসরি তা উপভোক্তাদের কাছে পাঠানো হবে নাকি কোনও নির্দিষ্ট প্রকল্পের মাধ্যমে তা পৌঁছানো হবে, তার ভারসাম্য রাখতে হবে অমিতবাবুকে।
মিটবে কি?
• সামাজিক প্রকল্প
• বাড়তি ডিএ
• ক্ষতিপূরণ (এনআরসি)
কোন পথে অর্থ
• কেন্দ্রীয় অনুদান
• আয়করের প্রাপ্য অংশ
• জিএসটির ভাগ
• মদ ও লটারি থেকে আয়
অন্য দিকে, জিএসটি চালু হওয়ার পর রাজ্যের আয়ের বেশির ভাগটাই আসে কেন্দ্র থেকে। তাই খরচ বাড়ালেও আয়ের বাড়তি সংস্থান কোথা থেকে হবে তা নিয়ে কিঞ্চিৎ চিন্তায় নবান্ন। কারণ, আয় বাড়াতে ভরসা মদ আর লটারি। যা নিয়ে ‘ধীরে চলো’ নীতিই নিয়েছে সরকার। তাই আয়ের জন্য কেন্দ্রীয় অনুদান, আয়করের প্রাপ্য টাকা আর জিএসটি ক্ষতিপূরণেই ভরসা রাখতে হচ্ছে।
সরকারি কর্মীরা আবার অন্তত এক কিস্তি ডিএ-র আশা করছেন। প্রতিক্রিয়ায় অর্থ দফতর সামান্য হলেও ডিএ ঘোষণা করতে পারে। যদিও নবান্নের কর্তাদের একাংশের মতে, বেতন কমিশনের বাড়তি বোঝা মাথায় নিয়ে ডিএ দেওয়ার ক্ষমতা সরকারের নেই। বাড়তি টাকা কিছু জোগাড় হলে তা সামাজিক প্রকল্পেই ঢালার সম্ভাবনা বেশি।
২০১৯-২০’র বাজেটে সরকার সামাজিক ক্ষেত্রে ৮০ হাজার কোটি খরচ করেছে। তার মধ্যে ২৭ হাজার কোটি ছিল মূলধনী ব্যয়। যা নতুন স্থায়ী সম্পদ তৈরিতে কাজে লাগানো হয়। অর্থমন্ত্রী এই দুই ক্ষেত্রেই খরচ বাড়াতে চান বলে জানা গিয়েছে। প্রশ্ন, খরচ তো হচ্ছে, কিন্তু আয় হবে কোথা থেকে?
নবান্নের খবর, ২০২০-২১’র বাজেটে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে আয়কর ও কর্পোরেট করের প্রাপ্য প্রায় ৭০ হাজার কোটি ছুঁতে পারে। কেন্দ্রীয় অনুদান মিলতে পারে আরও অন্তত ৩৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে জিএসটি ক্ষতিপূরণ ধরলে সে দিক থেকেও ১৪% আয় বাড়ার সুযোগ থাকছে। তার পর যেমন প্রয়োজন তেমন বাজার থেকে ধার করেই রাজকোষের ঘাটতি সামলাতে হবে বলে জানাচ্ছেন নবান্নের কর্তারা। তবে খরচ বা রাজকোষ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে না-থাকলেও রাজ্যের উন্নয়নের অভিমুখ বাজেটে বজায় থাকবে বলেই জানাচ্ছেন অর্থ কর্তারা।