সাংবাদিক বৈঠক করতে আসছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। নিজস্ব চিত্র। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (বাঁ দিকে)। ফাইল চিত্র।
আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকেরা কিছুটা সুর নরম করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি হয়েছেন। তবে তাঁদের শর্ত, মিডিয়ার সামনে বৈঠক করতে হবে। নবান্ন সূত্রে যদিও খবর, মিডিয়ার সামনে বৈঠক হবে না। এই বিষয়ে জটিলতা না বাড়লে আজ, সোমবার বিকেল তিনটেয় নবান্নে বৈঠক হতে পারে। কিন্তু মিডিয়ার উপস্থিতি মানা না হলে বৈঠকে যোগ দেবেন কি না, তা নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত আলোচনা চলে চিকিৎসকদের।
পূর্ব ঘোষণা মতো রবিবার সকাল ১১টা থেকে প্রথমে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক সভাগৃহে বৈঠক করেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা বৈঠক শেষে আন্দোলনকারীদের তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় তাঁদের আপত্তি নেই। কিন্তু বৈঠক হোক সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতে। বৈঠকের স্থান নির্বাচনের বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর উপরেই ছেড়ে দেন ওঁরা। তবে রাজ্যের ১৪টি মেডিক্যাল কলেজ থেকে পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রতিনিধি এবং মিডিয়ার উপস্থিতির দাবি জানানো হয়।
রাতের দিকে নবান্ন সূত্রে জানা যায়, আন্দোলনকারীদের সব ‘শর্ত’ মানতে রাজি নয় সরকার। জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি, প্রতিনিধিদলে প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ থেকে ২-৫ জন থাকবেন। তবে এত জনের সঙ্গে বৈঠকে প্রাথমিক ভাবে সায় নেই স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য, প্রতিটি কলেজ থেকে দু’জন করে প্রতিনিধির উপস্থিতিই যথেষ্ট।
তবে প্রতিনিধির সংখ্যা নয়। প্রশাসনের প্রধান আপত্তি মিডিয়ার উপস্থিতির দাবি নিয়ে। চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, জেলায় জেলায় প্রশাসনিক বৈঠক যদি ‘লাইভ’ হতে পারে তা হলে এ ক্ষেত্রে আপত্তি কোথায়! প্রশাসনের কর্তারা তাতে আমল দিতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, তেমন হলে বৈঠকে কী হল যৌথ সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেওয়া হবে। এনআরএস সূত্রের খবর, ‘লাইভ’ বৈঠকের দাবি খারিজ হলে বিকল্প দাবিও ভেবে রাখা হয়েছে। তৃতীয় কোনও পক্ষকে দিয়ে ভিডিয়োগ্রাফির কথা বলা হতে পারে। তা-ও মানা না হলে? রাত পর্যন্ত তা নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অচলাবস্থা কাটানো যে জরুরি তা দু’পক্ষই উপলব্ধি করছেন।
আরও পড়ুন: আপনার ব্যবহারই আপনার পরিচয়! ডাক্তাররাও কেন এটা শিখবেন না
এনআরএস সূত্রের খবর, এ দিনের সভাতেও এই মতের প্রতিফলন ঘটে। মুখ্যমন্ত্রীর আলোচনায় রাজি হওয়া যে আন্দোলনের জয়, তা সকলকে বোঝানোর চেষ্টা হয়। আলোচনার রাস্তা বন্ধ হলে মানুষের সমর্থন কমতে পারে, সেই আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদ যাতে কোনও ভাবে ‘ইগো’র লড়াই না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়েও সতর্ক করেন কেউ কেউ। সভা শেষে আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র বলেন, ‘‘মানুষের মনে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসতে চাই।’’
এ দিন এনআরএসে যখন এই সভা চলছিল, দোতলায় প্রিন্সিপালের কার্যালয়ে অপেক্ষা করছিলেন স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা প্রদীপ মিত্র। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ-শিক্ষক-ডাক্তাররাও ছিলেন। দুপুরের দিকে স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তাকে সভায় ডেকে নেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। সূত্রের খবর, তিনি শুরুতেই বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী দলীয় কার্যালয় বা তাঁর বাড়িতে বৈঠক ডাকেননি। জুনিয়র চিকিৎসকদেরই দাবি হওয়া উচিত ছিল নবান্নে বৈঠক হোক।’’
বিরোধী নেতারাও জট কাটার সম্ভাবনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। তবে বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীই আগে সংবাদমাধ্যমের সামনে আলোচনা করেছেন। ইতিবাচক ভঙ্গিতেই এই প্রস্তাব গ্রহণ করা উচিত তাঁর।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী এবং ডাক্তার, দু’পক্ষই আগে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। ডাক্তারবাবুরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করুন, ঝগড়া মিটিয়ে নিন। কিন্তু আগে মানুষের সেবা করুন।’’