কোন লাইনে যাব, বিভ্রান্ত বঙ্গ সিপিএম

প্রকাশ কারাট বনাম সীতারাম ইয়েচুরি! সঙ্গে বি ভি রাঘবুলু। আম আদমির কাছে সিপিএমে নেতৃত্বের লড়াই। কিন্তু ইয়েচুরির নিজের মতে, ‘ব্যাটল অফ আইডিয়াস’! ভাবনার এই যুদ্ধে কোথায় বঙ্গ সিপিএম? অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যখন সিপিএম তৈরির পথে মতাদর্শের লড়াই তীব্র, তখন দু’ধরনের মতের পক্ষেই প্রবল সক্রিয় ভূমিকা ছিল বঙ্গজ নেতাদের। ভূপেশ গুপ্ত, প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসু তাঁদের মধ্যে কয়েকটি নাম মাত্র।

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী ও প্রেমাংশু চৌধুরী

কলকাতা ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৬
Share:

প্রকাশ কারাট বনাম সীতারাম ইয়েচুরি! সঙ্গে বি ভি রাঘবুলু। আম আদমির কাছে সিপিএমে নেতৃত্বের লড়াই। কিন্তু ইয়েচুরির নিজের মতে, ‘ব্যাটল অফ আইডিয়াস’! ভাবনার এই যুদ্ধে কোথায় বঙ্গ সিপিএম?

Advertisement

অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে যখন সিপিএম তৈরির পথে মতাদর্শের লড়াই তীব্র, তখন দু’ধরনের মতের পক্ষেই প্রবল সক্রিয় ভূমিকা ছিল বঙ্গজ নেতাদের। ভূপেশ গুপ্ত, প্রমোদ দাশগুপ্ত, জ্যোতি বসু তাঁদের মধ্যে কয়েকটি নাম মাত্র। দল প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পরে আজ যখন সিপিএমের সামনে অস্তিত্বের সঙ্কট, তখন মগজাস্ত্রের লড়াইয়ে তিন দক্ষিণী নেতাই কেন্দ্রীয় চরিত্র কারাট, ইয়েচুরি, রাঘবুলু! এঁদের মধ্যে কার পথে যাবেন, বিভ্রান্ত আলিমুদ্দিন!

বস্তুত, কেন্দ্রীয় কমিটিতে এ বারের তুলকালাম বিতর্কে দ্বিধাবিভক্ত বঙ্গ সিপিএমের নেতারা। একে তো পশ্চিমবঙ্গে ভোট কমছে, সংগঠনেও ধস নামছে। একের পর এক ঘটনায় উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। সংখ্যালঘুরাও সিপিএমের আশ্রয় ছেড়ে তৃণমূল এবং এমনকী, বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন! এই অবস্থায় দিল্লিতে বসে দলের কৌশলগত লাইন নিয়ে বিতর্ক করা যথেষ্ট চাপের বৈকি! যদিও সিপিএম নেতৃত্ব বলছেন, পথ ঠিক না করলে যাবেন কোন দিকে? কিন্তু সেই পথ খুঁজতে গিয়েও বিভ্রান্তি বঙ্গ সিপিএমে!

Advertisement

সাম্প্রতিক কালে বঙ্গ ব্রিগেড ইয়েচুরির দিকেই থেকেছে। পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে ইউপিএ-১ সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য তারা কাঠগড়ায় তোলে কারাটকেই। ইয়েচুরিও পশ্চিমবঙ্গের (ঘটনাচক্রে, যে রাজ্য থেকে তিনি সাংসদও বটে) নেতাদের হয়ে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটিতে গলা তুলেছেন। কিন্তু এ বার রাজ্যের সব নেতা ইয়েচুরির পাশে খোলাখুলি দাঁড়াতে পারছেন না!

জালন্ধর পার্টি কংগ্রেসে ৩৬ বছর আগে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মহাজোটের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল না ভুল, তা নিয়ে শীর্ষ নেতৃত্বে এখন জোর লড়াই চলছে। একই সঙ্গে দলের রাজনৈতিক রণকৌশল কী হবে, তা নিয়েও বিতর্ক। কারাট-শিবির দলের নিজস্ব শক্তি বাড়ানো ও বৃহত্তর বাম ঐক্যের উপরে জোর দিচ্ছে। সেখানে ইয়েচুরি বলছেন, সাম্প্রদায়িক শক্তির মোকাবিলাকেই প্রধান লক্ষ্য হোক। যার অর্থ, বিজেপি-র মোকাবিলায় কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতার রাস্তা খুলে রাখা। কী করবেন বাংলার নেতারা?

প্রাথমিক ভাবে সোমবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ রাজ্যের এক নেতা মধ্যপন্থা নেওয়ারই চেষ্টা করেছেন। পার্টি কংগ্রেসে সবিস্তার বিতর্ক করে লাইন চূড়ান্ত করার পক্ষে মত দিয়েছেন। পাশাপাশিই ভাঙাচোরা সংগঠনকে কিছুটা সাজানোর চেষ্টাই যে এ বার সম্মেলন-পর্বে তাঁদের লক্ষ্য, সেই কথাও জানিয়েছেন। কেরল থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যও সংগঠনের বাস্তবতাই ধরতে চেয়েছেন। ওই নেতার বক্তব্য, বাম দুর্গ পশ্চিমবঙ্গেও দলের অবস্থা শোচনীয়। নিজেদেরই যেখানে শক্তি নেই, সেখানে কংগ্রেস না বিজেপি কার সঙ্গে লড়ব, তা নিয়ে মাথা ঘামিয়ে কী হবে! দলেরই অন্য অংশের যুক্তি, নিজেদের শক্তি কমেছে বলেই অন্যের সঙ্গে সমঝোতার পথ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে!

তা হলে কোন পথে এগোতে চায় আলিমুদ্দিন? সিপিএম সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোয় রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কারাটের পক্ষেই সায় দিয়ে বলেছিলেন, তাঁরা বৃহত্তর বাম ঐক্যের পথেই হাঁটতে চান। যে কাজ পশ্চিমবঙ্গে শুরুও হয়েছে। কিন্তু রাজ্যে দলেরই অন্য একটি অংশ তৃণমূলের মোকাবিলা এবং বিজেপি-র উত্থান ঠেকাতে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার দরজা খুলে রাখতে চায়। বঙ্গ সিপিএমের এক নেতার কথায়, “ভোটের বাস্তব নিয়ে যাদের মাথা ঘামাতে হয়, তারা ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ঐক্যের কথাই বলবে।”

রাজের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও দলের অন্দরে প্রশ্ন তুলেছেন বৃহত্তর বাম ঐক্য করতে গিয়ে অতি-বাম বা নকশালপন্থী নানা দলকে টেনে আনা নিয়ে। পশ্চিমবঙ্গে এরা অতীতে বামফ্রন্ট সরকারের তীব্র বিরোধিতা তো বটেই, শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও নানা আপত্তি তুলেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ তৃণমূলকেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে সাহায্য করেছে। এদের সঙ্গে নিয়ে আখেরে কতখানি লাভ হবে, তা নিয়ে বুদ্ধবাবুর মনেও প্রশ্ন রয়েছে। একই ভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ঐক্যকে প্রসারিত করার পক্ষে গৌতম দেবও। কিন্তু অসুস্থতার কারণে এঁরা কেউই দিল্লিতে বৈঠকে নেই। তাই কারাট-শিবির যখন তামিলনাড়ু বা অন্ধ্রের নেতাদের দিয়ে ইয়েচুরির মত খণ্ডন করাচ্ছে, তখন পাল্টা যুক্তি নিয়ে দাঁড়াতে পারছেন না বাংলার কেউ!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement