State News

সম্পত্তির লোভে বৌদি-ভাইপোকে খুন, মৃত্যুদণ্ডের সাজা আদালতে

সরকারি কৌঁসুলি মহম্মদ আবু বক্কর ঢালি জানান, বেলেঘাটার সুরেন সরকার রোডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ সাহা মূল অভিযুক্ত সত্যের দাদা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০২:২৬
Share:

শিয়ালদহ আদালতের বাইরে সত্য সাহা। ছবি: সুমন বল্লভ

বাড়ি লিখে দেননি দাদা। সেই সম্পত্তি-বিবাদের জেরে বৌদি ও এক বছরের ভাইপোকে খুনের দায়ে সত্য সাহা নামে এক ব্যক্তিকে শুক্রবার মৃত্যুদণ্ড দিল শিয়ালদহ আদালত। সেই সঙ্গে খুনে সাহায্য করা এবং জোড়া মৃতদেহ লোপাটের দায়ে সত্যের স্ত্রী নন্দিতা সাহাকে যাবজ্জীবন কারাবাসের নির্দেশ দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়।

Advertisement

সরকারি কৌঁসুলি মহম্মদ আবু বক্কর ঢালি জানান, বেলেঘাটার সুরেন সরকার রোডের বাসিন্দা বিদ্যুৎ সাহা মূল অভিযুক্ত সত্যের দাদা। ২০০৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর সকালে বিদ্যুতের স্ত্রী বুলু ও তাঁর ছেলে ইন্দ্রজিৎ খুন হন। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ভারী কিছু দিয়ে মাথায় আঘাত করার পরে শ্বাসরোধ করে বুলুকে খুন করা হয়। এক বছর বয়সি ইন্দ্রজিৎকে শ্বাসরোধ করে মারা হয় তার পরে। শিশুটির বস্তাবন্দি দেহ আরজি কর হাসপাতালের পাশে খালে ফেলে দেয় সত্য। পরে গাড়িতে বৌদির বস্তাবন্দি দেহ তুলে নিয়ে হুগলির চণ্ডীতলা থানা এলাকায় দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের পাশে একটি ঝোপে ফেলে দেয় সে।

বুলুর দাদা বিশ্বজিৎ পাল জানান, তাঁর ভাগ্নেকে তার জন্মদিনেই খুন করা হয়। সে-দিন ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল বুলুর। বোন বাড়িতে না-পৌঁছনোয় ১৪ ডিসেম্বর রাত ১২টা নাগাদ বেলেঘাটা থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করেন তিনি। বিদ্যুৎবাবু তাঁদের জানাতে পারেননি, ছেলে ও স্ত্রী কোথায় গিয়েছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: সংবিধান মেনেই বক্তৃতা রাজ্যপালের, অর্থ বিল পেশেও সম্মতি

বিশ্বজিৎ জানান, ১৫ ডিসেম্বরের সংবাদপত্রে তিনি দেখেন, আগের দিন আরজি কর হাসপাতালের পাশের খাল থেকে বস্তাবন্দি যে-শিশুর দেহ উদ্ধার করা হয়েছিল, তার মুখের সঙ্গে তাঁর ভাগ্নের মুখের মিল আছে। ওই হাসপাতালের মর্গে গিয়ে ইন্দ্রজিৎকে শনাক্ত করেন তিনি। ঘটনার দু’দিন পরে উদ্ধার হয় বুলুর দেহ। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে গিয়ে তাঁকে শনাক্ত করা হয়। ওই দিনই নন্দিতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ঘটনার পর থেকে পলাতক ছিল সত্য। ২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি কাঁকুড়গাছি থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

বুলুর দাদা জানান, তাঁর ভগিনীপতি শিয়ালদহ কোলে মার্কেটে পেঁয়াজের ব্যবসা করেন। সত্য ডানকুনিতে ঠান্ডা পানীয় তৈরির কারখানায় কাজ করত। সুরেন সরকার রোডের বাড়িটি তার নামে লিখিয়ে দেওয়ার জন্য বিদ্যুৎ ও বুলুকে চাপ দিত সত্য। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের জেরেই তাঁর বোন ও ভাগ্নেকে নৃশংস ভাবে খুন করা হয় বলে তদন্তকারীদের কাছে অভিযোগ জানান বিশ্বজিৎ।

সরকারি কৌঁসুলি জানান, ৪৬ জন সাক্ষী ছিলেন। ইন্দ্রজিতের দেহ উল্টোডাঙা এলাকা থেকে উদ্ধার হয় বলে ওই থানার পুলিশই তদন্ত করে। শুনানিতে সত্যদের আইনজীবী নরেশ ঘোষ আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলরা নির্দোষ। তাঁরা খুন করেননি।

বিচারক চট্টোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সত্য ও তাঁর স্ত্রীকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ দিন বিচারক ওই দম্পতিকে জানান, তাদের কিছু বলার থাকলে তারা আদালতকে জানাতে পারে। ওই দম্পতি জানায়, তারা নির্দোষ। সেই সঙ্গেই স্বামী-স্ত্রী বলে, তাদের ১৩ বছরের একটি ছেলে আছে। তাকে দেখার কেউ নেই। দোষীদের বক্তব্য শোনার পরে সত্যের ফাঁসি এবং নন্দিতার যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement