TMC

টোটকা কি ভুলেছেন দিদি, ‘ব্যান্ড-এড’ হাতে প্রশ্ন বেচা’র

লাগামহীন নেতাদের বেফাঁস মুখ বন্ধ করতে কি কাজে লাগবে দেড় যুগ আগের ‘মহৌষধি’? যদি এখনও তা ‘জাগ্রত’ থাকে, তবে সেই মহার্ঘ বস্তুটি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে দলের মন্ত্রীর পকেটে।

Advertisement

রবিশঙ্কর দত্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৮:৪৫
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

সামনে কারও মুখ চাপা দিলে পিছনে আর এক জন। তাঁকেও যদি বা সামলানো গেল তো এ পাশ থেকে কেউ অথবা ও পাশ থেকে অন্য কেউ।

Advertisement

লাগামহীন নেতাদের বেফাঁস মুখ বন্ধ করতে কি কাজে লাগবে দেড় যুগ আগের ‘মহৌষধি’? যদি এখনও তা ‘জাগ্রত’ থাকে, তবে সেই মহার্ঘ বস্তুটি খুঁজে পাওয়া যেতে পারে দলের মন্ত্রীর পকেটে। শুধুমাত্র নেত্রী বললেই পাঞ্জাবির বুক-পকেট থেকে টেলিফোনের নোটবুকে ভিজিটিং কার্ড, আলু-পেঁয়াজের দর লেখা টুকরো কাগজ, ফোন নম্বর লেখা চিরকুটের মধ্যে থেকে রাজ্যের কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বার করে দিতে পারেন ‘মহৌষধি’টি— এক জোড়া ‘ব্যান্ড-এড’! সিঙ্গুর আন্দোলনের সময়ে দলের কাজকর্মে গোপনীয়তা রাখতে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা দিয়েছিলেন তাঁর বিশ্বস্ত যোদ্ধা বেচারামকে।

তখন শাসক সিপিএম, পুলিশ-প্রশাসন আর টাটা সংস্থার থেকে লুকিয়ে নানা কর্মসূচি নিয়েছে তৎকালীন বিরোধী তৃণমূল কংগ্রেস। জমি আন্দোলনে সেই লুকোচুরির সময়ে নিজেদের কৌশল গোপন রাখার জন্য বেচারামের মুখ বন্ধ করার সেই ‘মহৌষধি’ দিয়েছিলেন মমতা! দলের অন্দরে সাম্প্রতিক এই ‘বেয়াড়াপনার’ পরিপ্রেক্ষিতে সেই স্মৃতি ফিরছে বেচারামের। তাঁর স্মৃতি, ‘‘মমতাদি এক দিন ডাকলেন। বললেন, মুখ বন্ধ রাখবি। সব কথা সবাইকে বলার দরকার কী!’’ তখন কথা বলতে তো সেইকারখানার জন্য যে জমি নেওয়ার পরিকল্পনা হয়েছিল, তা ‘আগলে’ রাখার পথ। এখন অবশ্য দলের কথা যাতে বাইরে না যায়, তা নিশ্চিত করতেই মুখ বন্ধ করার প্রয়োজন বাড়ছে শাসক তৃণমূলে। সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী, নেতারা কখন কোথায় কার বিরুদ্ধে কী বলে ফেলছেন, তার উপরেই নজর রাখতে হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।

Advertisement

চরম অস্বস্তি ঠেকাতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত শৃঙ্খলার চিন্তায় তিন-তিনটি কমিটি গড়ে দিয়েছেন মমতা স্বয়ং। তাতেও নিশ্চিন্ত হতে পারেননি ‘ল্যাম্পপোস্টের দলে’র একমাত্র ‘পোস্ট’। তাই ১৩ বছরের ক্ষমতাকালে বিধানসভায় পরিষদীয় দলের বৈঠকে প্রথম বার হাজিরই হননি, বিশৃঙ্খলা দূর করতে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কড়া হচ্ছেন। সেই সূত্রে বিধানসভার লবিতে দাঁড়িয়ে পকেটের নোটবুকের মধ্যে প্রায় পুজোর ফুল-বেলপাতার মতো করে রেখে দেওয়া ‘ব্যান্ড-এড’ জোড়া বার করছেন বেচারাম। সযত্নে তা মাথায় ঠেকানোর সময়ে চোখে চোখে চোখ পড়তেই মন্ত্রী বললেন, ‘‘এ ওষুধের জুড়ি নেই। ভাবছিলাম, দিদিকেই এক বার মনে করিয়ে দিই! কিন্তু পরিস্থিতি যা হয়েছিল, তাতে সাহস হল না!’’

তৃণমূলের এক রসিক নেতা অবশ্য বলছেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরে সেই স্টিকিং প্লাস্টার তো বিরোধীদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে! তাই আমাদের তাকম পড়েছে!’’

এই যুক্তি খণ্ডন করা কঠিন। কারণ, ২০১১ সালে সরকারগঠনের পরে বিরোধীরা প্রশ্ন করলেই মমতা তাঁদের মুখে ‘লিউকোপ্লাস্ট লাগিয়ে বসে থাকা’র নিদান দিয়েছেন! নেতা মনে করিয়েছেন, ‘‘এখন অবশ্য দলের লোকদের মুখ বন্ধ রাখার শপথ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement