ইনিও ভোটকর্মী। দুর্গাপুরে মঙ্গলবার সব্যসাচী ইসলামের তোলা ছবি।
সন্ত্রাসের আবহ তৈরির অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ শুরু হয়েছে ভোট ঘোষণার পর থেকেই। ভোটের আগের দিনও বজায় রইল সেই আবহ।
দুর্গাপুরে সিপিএমের কর্মীদের মারধর, এজেন্ট হয়ে বুথে গেলে বাড়িতে হামলার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের তরফে আবার সিপিএমের বিরুদ্ধে এলাকায় শান্তিভঙ্গের অভিযোগ জানানো হয়েছে। প্রচারে বাধার অভিযোগও উঠেছে। পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জমা দিয়েছে দু’পক্ষই। আসানসোল লোকসভা এলাকা থেকে মোটরবাইক বাহিনী এনে সন্ত্রাস সৃষ্টির সম্ভাবনার অভিযোগও এনেছে দু’পক্ষ।
এক সময়ের লালদুর্গ দুর্গাপুরে সিপিএমের ধস নামা শুরু ২০১১ সালের বিধানসভা ভোট থেকে। সে বার দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিমদু’টি আসনই সিপিএমের হাত থেকে ছিনিয়ে নেয় তৃণমূল। পুরসভা গঠনের পর থেকে বরাবর সিপিএম তথা বামফ্রন্টের হাতে ছিল বোর্ড। ২০১২ সালে তা-ও হাতছাড়া হয়। এর পরেই সিপিএমের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ কার্যত নিজেদের গুটিয়ে নেয়। তবে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের তদারকিতে লোকসভা ভোট ঘিরে ফের সংগঠন চাঙ্গা করতে সামনে এসেছেন তাঁদের অনেকে। দলের নেতাদের অভিযোগ, তৃণমূল সন্ত্রাস করে তা আটকাতে চাইছে। রবিবার রাতে বেনাচিতির নেতাজি কলোনির সিপিএম কর্মী প্রদীপ শিকদারকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। তিনি ভর্তি রয়েছেন ইএসআই হাসপাতালে। মঙ্গলবার তাঁকে দেখতে যান দলীয় প্রার্থী সাইদুল হক। তাঁর অভিযোগ, “ওই কর্মীকে মারধর করেছে তৃণমূল। সন্ত্রাস সৃষ্টি করে এ ভাবে মানুষকে দমিয়ে রাখা যাবে না। আমরা নির্বাচন কমিশনের কাছে আধা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি আরও বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছি।” এ দিনই ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের হরিবাজার এলাকার সিপিএম কর্মী হামিদা বিবি পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়ের করা অভিযোগে জানিয়েছেন, দুপুরে তৃণমূলের লোকজন তাঁকে পোলিং এজেন্ট না হওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমি বা আমার পরিচিত কেউ সিপিএমের এজেন্ট হয়ে বুথে বসলে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেবে বলে হুমকি দিয়েছে। গালিগালাজও করেছে।”
শুধু সিপিএমই যে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে, এমন নয়। তৃণমূলের তরফেও ২৫ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে সিপিএম নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এলাকায় শান্তিভঙ্গ, তাদের নির্বাচনী প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করেছে তৃণমূল। দলের ৩ নম্বর ব্লক সভাপতি সুনীল চট্টোপাধ্যায় জানান, পাশের আসানসোল লোকসভা এলাকায় ভোট ৭ জুন। সেই এলাকার জেমুয়া থেকে সিপিএমের মোটরবাইক বাহিনী এসে এই দুই ওয়ার্ডে সন্ত্রাস ছড়াবে বলে আশঙ্কা করছেন সুনীলবাবু। আবার ও দিকে সিপিএমের জেমুয়া-বিধাননগর লোকাল কমিটির সম্পাদক পঙ্কজ রায়সরকারের দাবি, পুরসভা ভোটের মতোই শঙ্করপুর থেকে তৃণমূলের মোটরবাইক বাহিনী এলাকা দাপাবে। ফলে, ভোট দিতে বাধা পাবেন সাধারণ মানুষ। বস্তুত, এই দুই ওয়ার্ডে অশান্তির আশঙ্কা করছে দুই দলই।
মহকুমা প্রশাসন অবশ্য সুষ্ঠু ভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য যাবতীয় বন্দোবস্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে। পরিস্থিতি আগাম আঁচ করে এলাকা অনুযায়ী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক তথা সহকারী রিটার্নিং অফিসার কস্তুরী সেনগুপ্ত বলেন, “সবাই যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে তেমন ব্যবস্থাই নেওয়া হয়েছে।” তিনি জানান, এর পরেও কেউ কোনও সমস্যায় পড়লে কমিশনের কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে পারেন।