হাসপাতালে ভর্তি সিপিএম নেতা শিবশঙ্কর দাস। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের উপস্থিতিতে প্রায় পাঁচ বছর পরে খোলা হয়েছিল পার্টি অফিস। তিন দিন পরেই ফের বন্ধ হয়ে গেল সিপিএমের কেতুগ্রাম ১ উত্তর লোকাল কমিটি অফিস। সিপিএমের অভিযোগ, সোমবার হামলা চালিয়ে তৃণমূলের লোকজন অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছে। তৃণমূল যদিও কোনও হামলার কথা মানেনি।
শুক্রবার কেতুগ্রাম ১ ব্লক সদর কান্দরায় ওই লোকাল কমিটি অফিসের তালা খুলেছিলেন দলের নেতারা। গত লোকসভা ভোটের পর থেকে তৃণমূলের সন্ত্রাসে অফিসটি তাঁরা খুলতে পারেননি বলে অভিযোগ সিপিএম নেতাদের। ভোট সংক্রান্ত কাজকর্ম করার জন্য পুলিশ-প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে এই অফিস খোলেন তাঁরা।
সিপিএমের অভিযোগ, এ দিন দুপুরে কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ ও পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জাহাঙ্গির শেখের নেতৃত্বে কয়েক জন এই লোকাল কমিটি অফিসে হামলা চালায়। কয়েক জনকে মারধর করা হয় বলে লোকাল কমিটির পক্ষে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ করেন রবীন্দ্রনাথ পাল। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, মারধরের পরে তৃণমূলই অফিসটি বন্ধ করে দিয়েছে। যদিও সিপিএমের একটি পক্ষের আবার দাবি, পার্টি অফিসের ভিতরে কোনও মারধরের ঘটনা ঘটেনি। সেখানে গিয়ে হুমকি দিয়ে পার্টি অফিস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কান্দরায় লোকাল কমিটির অফিস বন্ধ হওয়ার আগে ওই ব্লকেরই পালিটা গ্রামে পোস্টার সাঁটানোর সময়ে সিপিএমের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সিপিএমের অভিযোগ, এই ঘটনায় কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা লোকাল কমিটির সদস্য শিবশঙ্কর দাস-সহ পাঁচ জন প্রহৃত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শিবশঙ্করবাবু কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি।
এ দিন দুপুরে হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে তাঁর অভিযোগ, “আমরা গত পাঁচ বছর ধরে প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে পারিনি। শুক্রবার দলের লোকাল কমিটি দফতর খোলার পরে সাহস করে আজ সকালের দিকে পরিত্যক্ত বাড়ি, গোয়ালঘরে পোস্টার দিচ্ছিলাম। ওই সব জায়গার মালিকদেরও অনুমতি নিয়ে রাখছিলাম। পালিটা বাসস্ট্যান্ডে আসার পরেই জনা ১৫ তৃণমূল কর্মী-সমর্থক আমাদের ঘিরে ধরে মারধর করে। আমি ওদের হাতে মার খেয়ে পালিয়ে একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ি। ওরা সেই বাড়িতে ঢুকে কাঠ দিয়ে আমাকে মারধর করে।” এই ঘটনায় পাঁচ জন তৃণমূল কর্মীর নামে কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পালিটার ঘটনা জানাজানি হওয়ার পরেই জাহির শেখের নেতৃত্বে তৃণমূলের কয়েক জন কান্দরার সিপিএমের লোকাল কমিটি অফিসে যায়। সেখানে সবে অফিস খুলেছিলেন কান্দরার বাসিন্দা অজিত দাস ও মনভোলা শেখ। অভিযোগ, তৃণমূলের নেতারা তাঁদের বলেন, ‘তোমাদের নেতারা কাটোয়ায় আরামে থাকছেন। আর তোমরা পার্টি অফিস খুলে বসে আছ। তাড়াতাড়ি অফিস বন্ধ করে এখান থেকে যাও।’ এর পরেই সিপিএম কর্মীরা অফিস বন্ধ করে পালান বলে স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি।
সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য ফারুক মির্জার অভিযোগ, “রীতিমত পরিকল্পনা করেই এই হামলা চালিয়েছে তৃণমূল। রবিবার আমাদের ৩৫-৪০ জন লোকাল কমিটি অফিসে ছিলাম। সোমবার ওই দু’জনের যে অফিসে থাকার কথা, তা তৃণমূল জানত। সেই মতো সকালেই পার্টি অফিসে গিয়ে হুমকি দেয়।” এই ঘটনার পরে সিপিএমের স্থানীয় কর্মীরা লোকাল কমিটি অফিস খোলার সাহস পাবে না বলে মনে করছেন সিপিএমের উপর তলার নেতারা।
কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের জাহের শেখ অবশ্য হামলা বা হুমকির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তাঁর দাবি, “সিপিএমের নেতারা কাটোয়া-বোলপুরে থাকছেন। আর পার্টি অফিস খোলার জন্য নিচুতলাকে চাপ দিচ্ছেন। এই ক্ষোভে পার্টি অফিসে তালা মেরে সিপিএমের কর্মীরা পালিয়েছেন।” তৃণমূলের বর্ধমান জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শমীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আবার দাবি, “এই ঘটনা আসলে সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।” পুলিশ জানায়, গোলমালের অভিযোগ মিলেছে। তদন্ত চলছে।