তৃণমূল কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা, স্বজনপোষন ও মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন বাসিন্দারা। গুসকরা পুরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ঘটনা। অভিযোগটি কার্যত মেনে নিয়েছেন পুরপ্রধানও। যদিও অভিযুক্ত কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের দাবি, অভিযোগ ভিত্তিহীন।
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের দাবি, কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, মহকুমাশাসক, বিডিও ও পুরপ্রধানের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। তবে পুরসভা বা প্রশাসন কেউই কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।
গুসকরা পুরসভার বাসিন্দা তথা প্রাক্তন অ্যাথলিট সুদামা পাঠকের অভিযোগ, সাত নম্বর ওয়ার্ডটি মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত। কিছু তফসিলি জাতি ও উপজাতির মানুষও রয়েছেন। সব মিলিয়ে ওই ওয়ার্ডে বিপিএল তালিকাভুক্ত মানুষের সংখ্যা যথেষ্ট বেশি। কিন্তু তাঁরা পুরসভার কোনও সুযোগ সুবিধা পাননা। এমনকি প্রতিবন্ধীদের যে ভাতা পাওয়ার কথা তাও মেলে না বলে অভিযোগ। তাঁর আরও দাবি, ওয়ার্ডে পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই, শৌচাগার নেই, এমনি নিকাশি ব্যবস্থাও অনুন্নত।
সুদামাবাবুদের অভিযোগ, এলাকার শতকরা ৯০ভাগ অস্থি প্রতিবন্ধী ধনমনি কিস্কু ও শতকরা ১০০ ভাগ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পুশু কিস্কুর সরকারি নিয়মেই ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্তু বারবার আবেদন করার পরেও ওই কাউন্সিলর তাঁদের ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করেননি। ওই ওয়ার্ডের বহু বৃদ্ধ তথা বিধবা মহিলাও সরকারি ভাতা থেকে বঞ্চিত বলে তাঁদের দাবি। বাসিন্দাদের আরও অভিযোগ, কাউন্সিলর মৃত্যুঞ্জয়বাবুর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ করতে গেলে তিনি অভিযোগকারীদের মারধরের হুমকি দিচ্ছেন। এমনকী সরকারি টাকায় তৈরি একটি ঘর নিজে ভোগ করছেন। ঘরটি নিজের ঠাকুমার নামে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। ১০ সেপ্টেম্বর পুরো বিষয়টি উল্লেখ করে শতাধিক মানুষের স্বাক্ষর সম্বলিত অভিযোগপত্রটি জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, আউশগ্রাম ১ ব্লকের বিডিও প্রমুখের কাছে জমা দিয়েছেন তাঁরা। তারপর এক সপ্তাহ কেটে গেলেও কোনও ব্যবস্থা হয়নি বলে তাঁদের দাবি।
গুসকরা পুরসভার পুরপ্রধান বুর্ধেন্দু রায় বলেন, “সরকারের কাছ থেকে আমাদের পুরসভা এলাকায় হাউসিং ফর আর্বান পুওর প্রকল্পে ৩৩টা বাড়ি পেয়েছিলাম। ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে সেগুলি ভাগ করে দিয়েছিলাম। প্রত্যেক কাউন্সিলর দু’জন করে উপভোক্তার নাম দিয়েছিলেন। তালিকায় নাম থাকা উপভোক্তারাই ওই বাড়ি তৈরি করতে যা খরচ হয়েছিল অর্থাত্ ২ লক্ষ ২৯ হাজার টাকা করে পেয়েছিলেন। পরে খবর পাই, মৃত্যুঞ্জয়বাবু ওই দুটি বাড়ির একটি তাঁর ঠাকুমাকে দিয়েছেন। এই ঘটনা জানাজানি হতে স্থানীয় বিপিএল তালিকার মানুষেরা প্রচুণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন।”
তবে মৃত্যুঞ্জয়বাবুর দাবি, “আমার বিরুদ্ধে এ সব রটনো হচ্ছে। প্রতিদিন যে সমস্ত মানুষ আমার কাছে আসেন, তাঁদের যথাসম্ভব সাহায্য করার চেষ্টা করি।” তবে তিনি এও বলেন, “ঠাকুমা যদি গরিব হয়, তাহলে তাঁকে বাড়ি দেওয়ায় সমস্যা কোথায়?”
কিন্তু যেখানে খোদ পুরপ্রধান কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কার্যত কবুল করে নিয়েছেন, তারপরেও পুরসভা কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন? বুর্ধেন্দুবাবু বলেন, “না, ব্যবস্থা কিছু নেওয়া হয়নি। তবে আমি ওঁকে ডেকে বলেছি, কাজটা আপনি ঠিক করেননি।”
বর্ধমানের মহকুমাশাসক উত্তর স্বপন কণ্ডুু বলেন, “আমি ওই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে আমি গুসকরা পুরসভার চেয়ারম্যানকে একটি রিপোর্ট পেশ করতে বলেছি। রিপোর্ট পেলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”