বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের সচিবের উপর চড়াও হয়ে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল দু’দিন আগেই। সোমবার উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করে ওই সচিব শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের স্ত্রী ও মেয়ে অভিযুক্ত কর্মীদের শাস্তির দাবি করেন। এর সঙ্গেই শুভপ্রসাদবাবুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে নিরাপত্তা দেওয়া হয় নি কেন, সে প্রশ্নও করেন তাঁরা।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ শুভপ্রসাদবাবুর স্ত্রী রীতা নন্দী মজুমদার, মেয়ে শবনম সরিতা ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন। উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চাইলে সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁদের জানানো হয়, দেখা করা সম্ভব নয়। তবুও বারবার অনুরোধের পরে ২ মিনিটের জন্য উপাচার্যের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পান তাঁরা। রীতাদেবী উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের কাছে অভিযোগ করেন, “যে কর্মীরা ওই আধিকারিকের উপর চড়াও হয়েছিলেন তাঁদের শাস্তি দিতে হবে।” উপাচার্য বলেন, “আপনারা রাজনৈতিক কথাবার্তা বলছেন।” তাঁদের বেরিয়ে যেতেও বলেন তিনি। তখন ঘরের বাইরে বেরিয়ে গেলেও বিকেল ৪টে পর্যন্ত উপাচার্যের দফতরের বাইরেই বসেছিলেন তাঁরা। পরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ফের কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে স্মৃতিকুমারবাবু কথা বলতে রাজি হন নি।
শুভপ্রসাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে এলেও দফতরের বাইরে বেরোন নি এ দিন। পরে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “ওই তিন কর্মীর বদলির বিষয়টি উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও তাঁর মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। সে কথা কর্মচারী ইউনিয়নের লোক জানল কীভাবে?” বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবন্ধু সমিতির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম মুখোপাধ্যায়কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “বদলির বিষয়টি উপাচার্য ও রেজিস্ট্রার দেখেন। এ ব্যাপারে আধিকারিকদের মতামত থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যে কর্মী দেওয়া হবে, তাঁকে নিয়েই কাজ চালাতে হবে।” তাহলে আপনারা বিষয়টিতে ঢুকলেন কেন? তাঁর জবাব, “কর্মচারীদের স্বার্থ দেখতেই হয়। তাঁদের নিয়েই তো কাজ আমাদের।”
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিক সমিতির নেতাদের দফতরে ডেকে পাঠান উপাচার্য। তাঁদের বাইরে অপেক্ষা করা শুভপ্রসাদবাবুর স্ত্রী ও মেয়েকে জানাতে বলেন, এ ভাবে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করা যায় না। তাঁরা যেন পরে সময় চেয়ে আসেন এবং বক্তব্য লিখিত ভাবে নিয়ে আসেন। আধিকারিক সমিতির সদস্যদের মধ্যে অবশ্য বিষয়টি নিয়ে দ্বিধা দেখা যায়। বেশিরভাগ সদস্যই বামপন্থী। তাঁরা একাংশ মনে করেন কাজটা ঠিক হয়নি। আবার একাংশ সাফ বলেন, “কাউকে কিছু বোঝাতে পারব না। ঘটনার দিন কেন ডাকেন নি যখন এখন কেন কথা বলব?” আধিকারিক সমিতির নেতা দেবমাল্য ঘোষ বলেন, “আমাদের যে ভাবে শুভপ্রসাদবাবুর পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল তা পারিনি। আমাদের মধ্যে অনেকেই এই আন্দোলন সমর্থন করছেন না।”
সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবাদী আধিকারিক ও কলেজ শিক্ষকেরা কার্জন গেটে একটি পথসভা করেন। সেখানে তাঁরা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও আধিকারিকের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের মতান্তর, গোলমাল হতেই পারে। তবে সমস্যা মেটানোর দায়িত্ব দু’তরফের। মীমাংসাসূত্র বের করার দায়িত্বও তাঁদেরই। তবে এর মধ্যে সাধারণ কর্মীদের ঢোকার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁরা।