রেষারেষিতে দুর্ঘটনা, গেল দু’টি প্রাণ

দু’টি মিনিবাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেল দুই যাত্রীর। রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে দুর্গাপুরের বিধাননগরে ছ’শো মোড় এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃত আদিত্য ঘোষ (৫০) স্থানীয় জেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা। ভবতরণ কুণ্ডু (২৬) নামে অন্য জনের বাড়ি বাঁকুড়ায়। বাসের চালক ও খালাসি পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে বলে জানায় পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৪ ০০:৪১
Share:

গাছে ধাক্কা মেরে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া বাস। রবিবার দুর্গাপুরে। নিজস্ব চিত্র।

দু’টি মিনিবাসের রেষারেষিতে প্রাণ গেল দুই যাত্রীর। রবিবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে দুর্গাপুরের বিধাননগরে ছ’শো মোড় এলাকায়। পুলিশ জানায়, মৃত আদিত্য ঘোষ (৫০) স্থানীয় জেমুয়া গ্রামের বাসিন্দা। ভবতরণ কুণ্ডু (২৬) নামে অন্য জনের বাড়ি বাঁকুড়ায়। বাসের চালক ও খালাসি পলাতক। তাদের খোঁজ চলছে বলে জানায় পুলিশ।

Advertisement

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ৮বি রুটের মিনিবাসটি এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ দুর্গাপুর স্টেশন থেকে প্রান্তিকা যাচ্ছিল। মুচিপাড়া পেরিয়ে ব্যাঙ্ক কলোনির দিকে যাওয়ার সময়ে দুর্ঘটনাটি ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শী ও বাসের যাত্রীদের অভিযোগ, সামনের অন্য একটি মিনিবাসকে টপকে যাওয়ার জন্য বাঁ দিকের লেন ছেড়ে ডান দিক ধরে দ্রুত এগোচ্ছিলেন এই বাসটির চালক। ছ’শো মোড় এলাকায় বাঁ দিকের লেনে ফেরার চেষ্টা করার সময়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারের গাছে ধাক্কা মারে বাসটি। বাঁ দিকে থাকা অধিকাংশ যাত্রী বেশ জখম হন। রেহাই পাননি ডান দিকে থাকা অনেকেও। প্রায় ২০ জনকে আহত অবস্থায় দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে গেলে দু’জনকে মৃত বলে জানান চিকিৎসকেরা। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন-চার জনের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের অন্য হাসপাতালে পাঠানো হতে পারে। পুলিশ জানায়, বাসের বাঁদিকের অংশ দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে। চালকের ভুলেই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে।

বাসের যাত্রী মকসুমা খাতুনের মাথায় আঘাত লেগেছে। তিনি বলেন, “বেআইনি ভাবে অন্য লেন দিয়ে বাসটি ঢুকিয়ে দিয়েছিল চালক।” আর এক যাত্রী সুমিতা রায় জানান, তাঁর পায়ে চোট লেগেছে। দাঁত ভেঙেছে। তিনি বলেন, “মুচিপাড়া ছাড়ার পরেই বাসটি দ্রুত চলতে শুরু করে। যাত্রীরা কার্যত প্রাণ হাতে করে বসেছিলেন। তার পরেই এই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে।” যাত্রীদের অভিযোগ, ৮বি রুটের মিনিবাসগুলি প্রতি দিন অত্যন্ত দ্রুত গতিতে যাতায়াত করে। সামনের বাসের সঙ্গে পিছনের বাসের রেষারেষি লেগেই থাকে। স্থানীয় বাসিন্দা হৃদয় সাঁই বলেন, “আমরা রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে ভয় পাই। বাসের গতি নিয়ন্ত্রণে নজর না দিলে বড় দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।”

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বেসরকারি স্পঞ্জ আয়রন কারখানার কর্মী মৃত আদিত্যবাবুর সঙ্গে ছিলেন তাঁর মেয়ে রূপা মণ্ডল। তিনিও দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হন। হাত ভেঙে গিয়েছে। চোট লেগেছে নাকে। সন্ধ্যার পরে তাঁকে মহকুমা হাসপাতাল থেকে বিধাননগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। জেমুয়ায় আদিত্যবাবুর বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী গায়ত্রীদেবী। খবর শোনার পর থেকে তিনি প্রায় বাকরুদ্ধ। আদিত্যবাবুর ছেলে চিন্ময়বাবু বেশ কিছু প্রতিবেশীর সঙ্গে মহকুমা হাসপাতালে আসেন। তিনি বলেন, “দুর্গাপুর স্টেশন বাজার থেকে জিনিসপত্র কেনাকাটা করে বাড়ি ফিরছিল বাবা ও বোন। তখনই এমন ঘটে গেল।” পুলিশ জানায়, বাঁকুড়ার মৃত যাত্রীর সঙ্গের কাগজপত্র থেকে নাম জানা গিয়েছে। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়া জেলার কোথায়, তা রাত পর্যন্ত জানা যায়নি।

বাস মালিকদের সংগঠন ‘দুর্গাপুর মিনিবাস অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক অলোক চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দুর্গাপুর শহরে এত বড় দুর্ঘটনা শেষ কবে ঘটেছে, মনে করতে পারছি না। কেন এমন হল, তা এখনই বলা মুশকিল।” তিনি জানান, বাসকর্মীদের দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন তাঁরা। তাঁদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। অন্য এক সংগঠন ‘দুর্গাপুর প্যাসেঞ্জার ক্যারিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কাজল দে বলেন, “দুর্ঘটনাটি কী ভাবে হল পরিষ্কার নয়। যান্ত্রিক ত্রুটি হোক বা মানুষের ভুল, শুধরে নিতে হবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement